লাল লতিকা হট্টিটি | Red wattled Lapwing | Vanellus indicus

269
লাল লতিকা হট্টিটি
লাল লতিকা হট্টিটি | ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

যেখানে বড়সড়ো জলাশয় রয়েছে, সেখানে কম-বেশি লাল লতিকা হট্টিটি এর বিচরণও রয়েছে। পানিতে সম্পূর্ণ শরীরটা ডুবিয়ে শিকার খোঁজে না। বড় জোর হাঁটুসমান পানিতে নেমে শিকার খোঁজে। ফাঁকা মাঠেও দেখা যায়। সকাল-সন্ধ্যা কিংবা জ্যোসনা রাতেও খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। একা কিংবা দলবদ্ধভাবেও বিচরণ করে। দেশের সর্বত্রই এ পাখিটাকে কমবেশি দেখা যায়। আমি প্রথম দেখেছি হাসাইলে। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলায় পড়েছে। গিয়েছি বছর চারেক আগে। নদীভাঙন দেখতে।

পদ্মার পেটে ততক্ষণে হাসাইল বাজারটা হজম পক্রিয়ার পথে রয়েছে। হাসাইলবাসীর দুঃসময়ে পদ্মার পাড়ে পাখিটিকে দেখেছি সেদিন। একটি নয় ওরা সংখ্যায় একাধিক ছিল। দেখতে সুবিধাও হয়েছে তাই। কারণ পাখিরা একাকী থাকার চেয়ে দলবদ্ধ থাকা অবস্থায় বেশি সাহসী হয়। এতে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগও পাওয়া যায় বেশি। পাখিটা দেখতে ভারি চমৎকার। কিন্তু কণ্ঠস্বর কর্কশ। দলের অন্যদের সঙ্গে বনিবনা না হলে কর্কশ সুরে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘হট্টিটি..টি..টি..হট্টিট-টিট্’। স্ত্রী-পুরুষের কণ্ঠে পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ কণ্ঠ একটু ভারী। কণ্ঠস্বর শুনেও স্ত্রী-পুরুষের পার্থক্য বোঝা যায়।

পাখিটার বাংলা নামঃ লাল লতিকা হট্টিটি, ইংরেজি নামঃ রেড ওয়াটলড ল্যাপউইং, (Red-wattled Lapwingবৈজ্ঞানিক নামঃ Vanellus indicus, গোত্রের নামঃ চারাড্রিআইদি ।

আরো পড়ুন…
•হলদেগাল টি-টি •নদী টি-টি
•ধূসর টি-টি •সাদালেজি টি-টি

লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা। লতিকা চোখের দু’পাশ দিয়ে অতিক্রম করে গোল বৃত্তের রূপ নিয়েছে। সেটি দেখলে মনে হয় বুঝি ওরা চশমা পরে আছে। হট্টিটির গলা, বুক, মাথার তালু ও ঠোঁটের অগ্রভাগ কালো। ঠোঁটের গোড়া থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত লাল। চোখের পাশ থেকে ধবধবে সাদা টান ঘাড় হয়ে বুকের কিছু অংশসহ পেট ও লেজের তলা পর্যন্ত ঠেকেছে। ডানা বোজানো অবস্থায় পিঠ ও লেজের উপরি ভাগটা চকচকে বাদামির ওপর জলপাই রঙের আভা। পা বেশ লম্বা, বর্ণ হলুদ। হট্টিটি খুবই চতুর পাখি। চলাফেরায় থাকে অত্যন্ত হুঁশিয়ারি ভাব।

এরা পাঁচ ধরনের সুরে ডাকতে পারে বিপদ সংকেত, খুশির সংকেত, ডিমপাড়া ও বাচ্চা ফোটার সংকেত, বাচ্চা হারানোর সংকেত, বিপদ মুক্তির সংকেত। এ সুরগুলো আলাদা আলাদা ভাবে কণ্ঠে তুলতে পারে।

প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়, কেঁচো, কচি শাকসবজি ইত্যাদি । প্রজনন সময় মার্চ থেকে আগস্ট। মিলন শেষে মাটির অগভীর গর্তে অথবা মাঠ-প্রান্তরের নিরিবিলি স্থানে বাসা বাঁধে। বাসা দেখতে হাস্যকর। মাটির ঢেলা দিয়ে তৈরি করে। চারপাশে ছোট ছোট মাটির ঢেলা সাজিয়ে থালাকৃতির বাসা বানিয়ে মাঝখানে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। স্ত্রী-পুরুষ পালা করে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। হট্টিটির বাচ্চাদের জলপান বেশ মজাদার। মা পাখিটা জলে ভেজে বাচ্চাদের কাছে এলে ওরা মায়ের ভেজা লোম চুষে জলপান করে।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog