সোনালি বেনেবউ | Eurasian Golden Oriole | Oriolus oriolus

572
সোনালি বেনেবউ
সোনাবউ | ছবি: ইন্টারনেট

সোনালি বেনেবউ স্লিম গড়নের অতি সুদর্শন পাখি ‘সোনালি বেনেবউ’। দেখেছি দুবার মাত্র। সাক্ষাৎ ঘটেছে রায়পুর উপজেলার পূর্ব চরপাতা ও শায়েস্তানগর গ্রামে। সময় নিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি তখন। চোখের পলকেই হারিয়ে গেছে প্রতিবার। সে দেখাতে তৃপ্তি পাইনি বলা যায়। ফলে উদগ্রীব হয়ে আছি তৃতীয় দর্শনের। ফের দেখা হলে সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা রয়েছে। এদের জ্ঞাতিভাই হচ্ছে কালোমাথা বেনেবউ বা ইষ্টিকুটুম পাখি। অনেকে এদের দেখলেও সহজে চিনতে পারে না। কালোমাথা বেনেবউ বলে ভুল করে বসেন। ওরা দেশের আনাচেকানাচে যথেষ্ট নজরে পড়লেও সোনাবউ বা সোনালি বেনেবউদের ক্ষেত্রে তা বিরল দর্শন।

দেশে খুব বেশি দেখার নজির নেই। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম দেখার নমুনা রেকর্ড করা হয়। মূলত গ্রীষ্মকালে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করে এরা। শীতে এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে কাটিয়ে দেয়। আমাদের দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে হিমালয় অঞ্চল থেকে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অল্প কিছু স্থানে নজরে পড়ে তখন। স্বভাবে লাজুক ও শান্ত। থাকে বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি আড়ালে আবডালে গিয়ে প্রেয়সীকে মুগ্ধ করতে গান বাঁধে। মিষ্টিকণ্ঠে নিচু স্বরে গান গায় ‘পিউলোলো… উইলো…’। শুনতে খুবই চমৎকার সেই সুর। খিদে পেলে ওদের বাচ্চারাও মিষ্টি সুরে কাঁদে। সেই সুর বড়ই করুণ লাগে।

প্রজাতির বাংলা নামঃ সোনালি বেনেবউ, বা সোনাবউ, ইংরেজি নামঃ ইউরেশিয়ান গোল্ডেন ওরিওল, (Eurasian Golden Oriole), বৈজ্ঞানিক নামঃ Oriolus oriolus | এরা ‘হলুদিয়া পাখি’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•তামাটে লাল বেনেবউ •সরুঠোঁট বেনেবউ •কালাঘাড় বেনেবউ

দেশের পাখিবিশারদদের কেউ কেউ ‘ইউরেশীয় সোনাবউ’ নামকরণ করেছেন এদের। এরা লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির দেহের অধিকাংশ পালকই উজ্জ্বল হলুদ। কেবল ডানা ও লেজের উপরি ভাগের পালক কালো। কালো ডানায় রয়েছে হলুদ পট্টি। ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে চোখের ওপর দিয়ে গেছে কালো টান। ঠোঁট সোজা, গোলাপি-লাল। স্ত্রী পাখির বর্ণ একটু ভিন্ন। দেহের ওপরের দিকের পালক সবুজাভ হলদে। পেটের দিকে রয়েছে ফিকে হলুদ-বাদামির প্রচ্ছন্ন খাড়া রেখা। ঠোঁট সোজা, টকটকে লাল। পায়ের রঙ সিসে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পিঠের দিক জলপাই-হলুদ। গলা ও বুক সাদাটে। ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে ফিকে হলুদের ওপর কালো খাড়া রেখা।

প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, ফুলের মধু ও ছোট ফল। প্রজনন সময় মার্চ থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত। গাছের উঁচু ডালে খড়কুটা দিয়ে দোলনা আকৃতির বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog