হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি | Yellow crowned Woodpecker | Dendrocopos mahrattensis

315
হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি
হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট

অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি বিরল দর্শন হয়ে পড়েছে। অথচ এরা স্থানীয় প্রজাতিরই পাখি। যত্রতত্র দেখা মেলে না এখন আর। চট্টগ্রাম বিভাগে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। বিচরণ করে উঁচু গাছ-গাছালি সমৃদ্ধ বনাঞ্চলে। তবে খানিকটা বেশি দেখা মেলে ডালপালা ছড়ানো গাছ-গাছালির ওপর।

একাকি, জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দলছুট হয়ে হয়ে গেলে ‘চাক..চাক..চাক..’ আওয়াজ করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ভয় পেলে কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়। শিকার পদ্ধতি অন্যসব কাঠঠোকরাদের মতোই। পোকামাকড়ের সন্ধানে ঠোঁট দিয়ে গাছের মরা ডালের ফাঁপা স্থানে আঘাত করে। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল-তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নামঃ হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি, ইংরেজি নামঃ ইয়লো ক্রাউন্ড উডপেকার, (Yellow crowned Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নামঃ Dendrocopos mahrattensis | এরা ‘হলুদ কপালবিশিষ্ট পাকড়া কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•মেটেমাথা কাঠকুড়ালি •কলজেবুটি কাঠকুড়ালি •পাকড়া কাঠঠোকরা
•হলুদগলা কাঠঠোকরা •সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা •তামাটে কাঠকুড়ালি
•ধলামাথা কাঠকুড়ালি •ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা •খয়রা কাঠকুড়ালি
•বড় কাঠঠোকরা

লম্বায় ১৭-১৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির কপাল হলুদাভ। মাথার তালু লাল। ঘাড় কালো, যা পিঠ এবং লেজের ওপরের কালো ফোঁটার সঙ্গে মিশে গেছে। বস্তিপ্রদেশ সাদাটে। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনিতে সাদা ছোপ রয়েছে। গলা সাদা। বুকে পীতাভের ওপর কালচে ডোরা। পেটের নিম্নাংশে ছোট্ট লাল পট্টি। স্ত্রী পাখির কপাল থেকে সমস্ত মাথা সোনালি-বাদামি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ওদের মাথা অনুজ্জ্বল। দেহে মোটা ডোরা দাগ। বাদবাকি দেখতে স্ত্রী পাখিদের মতো। উভয়ের ঠোঁট সোজা, শিং-ধূসর। চোখ বাদামি-লালচে। পা ও পায়ের পাতা সেল্টে-ধূসর।

প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়। বিশেষ করে গাছ পিঁপড়া, উইপোকা, শুয়োপোকা, মথ ইত্যাদি খেতে দেখা যায়। ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মে। গাছের মরা কাণ্ডে নিজেরা গর্ত বানিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।