তামাটে লাল বেনেবউ হিমালয় এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশে। যত্রতত্র দেখা যায় না। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও তিব্বত পর্যন্ত। বিচরণ করে চিরহরিৎ বন বা আধা-চিরহরিৎ বন অথবা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিুভূমির বনে। বৃক্ষচারী পাখি। প্রয়োজন ছাড়া ভূমি স্পর্শ করে না। জোড়ায় কিংবা একাকী বিচরণ করে। স্বভাবে চঞ্চল। স্থিরতা নেই খুব একটা। গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে বেড়ায় সারা দিন। লাফাতে লাফাতে চোখের পলকে হারিয়ে যায়। ভাবটা এমন যেন রাজ্যের ব্যস্ততা তাড়া করছে ওদের। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে।
প্রথম দর্শনে যে কেউই মুগ্ধ হবেন বোধ করি। প্রজাতির রূপের বর্ণনা দিয়ে বোঝানো মুশকিল। এক কথায় দেখতে খুবই সুন্দর। গানের গলাও সুমধুর। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি আড়ালে আবডালে গিয়ে স্ত্রী পাখিকে মুগ্ধ করতে গান বাঁধে। মিষ্টি কণ্ঠে নিচু স্বরে গান গায়, ‘কো-কে-ওয়া’ সুরে। খিদে পেলে ওদের বাচ্চারাও মিষ্টি সুরে কাঁদে। সেই সুর শুনতে বড়ই করুণ লাগে। প্রজাতিটি বিশ্বে খুব ভালো অবস্থানে নেই বিধায় আইইউসিএন ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছে এদের।
পাখির বাংলা নামঃ তামাটে-লাল বেনেবউ, ইংরেজি নামঃ মেরুন ওরিয়োল (Maroon Oriole), বৈজ্ঞানিক নামঃ Oriolus traillii | এরা ‘তামারং বেনেবউ’ নামেও পরিচিত। দেশে মোট পাঁচ প্রজাতির বেনেবউ নজরে পড়ে। যথাক্রমে- ইউরেশীয় সোনাবউ, কালাঘাড় বেনেবউ, কালামাথা বেনেবউ, তামাটে-লাল বেনেবউ ও সরুঠোঁট বেনেবউ।
আরো পড়ুন…
•সোনালি বেনেবউ
•সরুঠোঁট বেনেবউ
•কালাঘাড় বেনেবউ
দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম মনে হলেও রঙে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। স্ত্রী-পাখি খানিকটা নিষ্প্রভ। উভয়ের মাথা, গলা, ঘাড় ও ডানা কালো। শরীরের বাদবাকি অংশ তামাটে-লাল রঙের। চোখের বলয় হলদে-সাদা, মণি কালো। ঠোঁটও ধূসর-কালচে।
প্রধান খাবারঃ শুঁয়াপোকা এবং কীটপতঙ্গ। এ ছাড়াও ফুলের মধু এবং ছোট ফলের প্রতি আসক্তি রয়েছে। বিশেষ করে পাকা ডুমুর ফল বেশি প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ-এপ্রিল। অঞ্চলভেদে প্রজনন সময় ভিন্ন হয়। তবে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ডিম-বাচ্চা তোলে। বাসা বাঁধে পেয়ালা আকৃতির। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের ছাল, তন্তু, সরু ঘাস-লতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।