মেটেবুক ঝিল্লি স্থানীয় প্রজাতির হলেও এদের দেখা পাওয়া ভার। ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা এদের স্বভাব। দিনের বেশিরভাগ সময় কোন জলার ধারে লম্বা ঘাস, ধান ক্ষেত, লতা-গুল্মের ঝোপের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখে। বাস মূলত হাওরাঞ্চলে, তবে সুন্দরবনের আশপাশেও এদের নজরে পড়ে। দেশের অন্যান্য বনজঙ্গলে অল্পস্বল্প দেখা যায়। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এরা উত্তেজিত হলে বা ভয় পেলে পেঙ্গুইনের মতো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ওই সময় ঠোঁট থাকে আকাশমুখী। তখন ‘ঢেরর… ঢেরর’ শব্দে চেঁচায়। উত্তেজনা কমে এলে নিঃশব্দে চলাফেরা করে। খোস মেজাজে থাকলে পানিতে সাঁতার কাটে। সাঁতারে বেশ দক্ষ। সাধারণত একাকি চলাফেরা করে।
বাংলা নামঃ মেটেবুক ঝিল্লি, ইংরেজী নামঃ স্লাটি- ব্রেস্টেড রেইল, (Slaty-breasted Rail), বৈজ্ঞানিক নামঃ Gallirallus striatus । এদের আরেক নাম পাটকিলেমাথা রেইল। অঞ্চলভেদে ঢেউর নামে পরিচিত।
আমাদের দেশ ছাড়া ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে দেখা যায়। এ পাখি লম্বায় ২৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট লম্বা লালচে-কালো মিশ্রণ। কপাল থেকে ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত পাটকিলে বর্ণ। বুক ব্যতীত সমস্ত শরীর কালো যার ওপরে অসংখ্য সাদা ফুটকি ও টান। গলা সাদাটে। গলার নিচ থেকে তলপেটের আগ পর্যন্ত স্লেট রঙের বা মেটে বর্ণের। তার ওপর রয়েছে একই বর্ণের আড়াআড়ি ভাঙ্গা ভাঙ্গা রেখা। লেজ খাটো। লম্বা পা জলপাই-ধূসর। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলে সামান্য তফাত্ রয়েছে। যেমন স্ত্রী পাখির পেটের দিকটা সাদাটে। অপরদিকে দেহের বর্ণ পুরুষ পাখির মতো অত চাকচিক্য নেই।
প্রধান খাবারঃ জলজ পোকা, ছোট চিংড়ি, ঘাস বীজ ইত্যাদি। তবে ল্যাদাপোকা ও কচড়া পোকার প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন সময় ঘনিয়ে এলে জলাশয় এলাকার ঝোপ জঙ্গলে অথবা নলবনের ভেতরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৫-৭টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৯-২২ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।