খয়রাপিঠ সুইবাতাসি চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। দেখতে হিংস মনে হলেও তত হিংস নয় এরা। কেবলমাত্র আক্রান্ত হলে আক্রমণ করে। মানুষের হাতে বন্দি হলে ঠোঁট এবং নখের আঁচড়ে যখম করতে সক্ষম হয়। উড়ন্ত অবস্থায় এদের ঠোঁট, মাথা ও লেজ সমান্তরাল থাকে। ফলে দূর থেকে মাথা এবং লেজ শনাক্ত করা কঠিন হয়। ওড়া অবস্থায় সামনে অগ্রসর হওয়ার কারণে মাথা-লেজ শনাক্ত করা যায়। শরীরের তুলনায় ডানা লম্বা থাকার কারণে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। মূলত এরা বন পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা হলেও ফাঁকা জায়গায়ও দেখা মেলে। ভূমি থেকে ১৮০০ মিটার উচ্চতায়ও দেখা যায়। স্বভাবে ভারি চঞ্চল। সারাদিন ওড়াওড়ি করে কাটায়। উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। বেশ দ্রুত উড়তে পারে। ঘণ্টায় প্রায় ১৭০ কি.মি. বেগে ওড়ে। একাকী কিংবা দলবদ্ধ হয়ে ওড়াওড়ি করে। জলপান ব্যতিরেকে পারতপক্ষে ভূমি স্পর্শ করে না।
বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যএশিয়া, দক্ষিণ সাইবেরিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। পশ্চিম ইউরোপেও দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে বিরল দর্শন বলা যায়। এরা বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়, তবে এদের উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে তালিকা করেছে আইইউসিএন। মূলত প্রজনন পরিবেশ সংকটের কারণে এরা উদ্বেগ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পাখির বাংলা নামঃ খয়রাপিঠ সুইবাতাসি, ইংরেজি নামঃ ব্রাউন-ব্যাকেড নিডলটেইল (Brown-backed Needletail) বৈজ্ঞানিক নামঃ Hirundapus giganteus | এরা ‘বাদামি পিঠ সুচলেজ বাতাসি’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন…
•ধলাকোমর সুইবাতাসি
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১২৩-১৬৭ গ্রাম। মাথা কালচে, তালুতে সাদা ছোপ। পিঠ ও ডানা বাদামি। কোমরের দু’পাশ সাদা। লেজের অগ্রভাগ কাঁটার মতো সুচালো। দেহতল কালচে। লেজতল সাদা। ঠোঁট কালো, ছোট। ঠোঁটের অগ্রভাগ কিঞ্চিত বাঁকানো। পা ছোট। পায়ের তুলনায় নখ বড় এবং ধারালো।
প্রধান খাবারঃ উড়ন্ত পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ সাইবেরিয়ার পাথুরে পাহাড়ে এবং ধ্বংসাবশেষ গাছে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।