পাকড়া কাপাসি পাখিটি পরিযায়ী। বিচরণ করে খোলা মাঠ, প্রান্তরে কিংবা তৃণভূমি অথবা নলখাগড়ার ঝোপের আশপাশে। এছাড়া ধানখেত, গমখেত, উম্মুক্ত বনভূমি, ছোট নদ-নদী ও জলাশয়ের আশপাশে বিচরণ করে। এরা খেত-খামারের উপর চক্কর দিয়ে শিকার খুঁজে বেড়ায়। দেখতে খানিকটা ভয়ঙ্কর হলেও চেহারাটা কিন্তু সুদর্শন। দেশে শীত মৌসুমে দেখা মেলে। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে এরা মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, ফিলিপাইন, সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থা সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যখেতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে।
পাখিটির বাংলা নামঃ পাকড়া কাপাসি, ইংরেজি নামঃ পাইড হ্যারিয়ার, (Pied Harrier) বৈজ্ঞানিক নামঃ Circus melanoleucos | এরা ‘পাকড়া মেঠো চিল’ নামেও পরিচিত। অনেকে এদেরকে ‘রাখাল ভুলানি’ নামে ডাকে।
আরো পড়ুন…
•মুরগি কাপাসি
•পুবের পানকাপাসি
•মন্টেগুর কাপাসি
•পশ্চিমা পানকাপাসি
•ধলা কাপাসি
•ভুবন চিল
•শঙ্খচিল
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪৩-৫০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির ওজন ২৫৪-৩২৫ গ্রাম। স্ত্রী পাখির ওজন ৩৯০-৪৫৫ গ্রাম। প্রসারিত ডানা ১১০-১২৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ নীলাভ কালো। ডানায় সাদা-কালো টান। লেজ সাদা হলেও ডানার কালো প্রান্তটা লেজের উপর এসে ঢেকে দিয়েছে। গলা ও বুক নীলাভ কালো। বুকের নিচ থেকে সাদা। গাঢ় কালো রঙে ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া হলুদ। চোখ উজ্জ্বল হলুদ, মণি কালো। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ, নখ কালো। অপরদিকে স্ত্রী পাখি তত সুদর্শন নয়। ওদের উপরের দিক অন্ধকার বাদামি কালো। দেহতল বাদামি রঙের।
প্রধান খাবারঃ ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ব্যাঙ, ইঁদুর, বড় পোকামাকড়, ফড়িং ও পঙ্গপাল। প্রজনন সময় গ্রীষ্মকাল। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। বাসা বাঁধে ঝোঁপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে অথবা ঘেসো ভূমিতে লম্বা ঘাস বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে উড়তে শিখে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।