পাতারি হাঁস | Common teal | Anas crecca

370
পাতারি হাঁস
পাতারি হাঁস | ছবি: ইন্টারনেট

পাতারি হাঁস প্রচণ্ড শীতে সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী হয়ে আসে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে। শীতের শুরুতে লতাগুল্ম আচ্ছাদিত বৃহৎ জলাশয়ে কিংবা হাওর-বাওরে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করতে দেখা যায়। দেখা যায় জলাশয়ের ওপর ওড়াউড়ি করতেও। এদের ওড়ার গতিও ভালো। উড়তে উড়তে অনেক সময় পুরুষ পাখি নিচুস্বরে ডাকে ‘ক্রিট..ক্রিট’। প্রজাতিটি সুলভ দর্শন হলেও আমাদের দেশে এরা নিরাপদ নয়। বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গত দশক আগেও দেশে এদের ব্যাপক বিচরণ ছিল। সে তুলনায় বর্তমান সময়ে নজরে পড়ছে না তেমনটি।

১৯৯৭ সালের দিকেও ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকে ব্যাপক দর্শনের নজির রয়েছে। দ্রুত এদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারনটিই হচ্ছে শিকারিদের দৌরাত্ম্য। দেখতে ভীষণ সুন্দর, ওজনে সামান্য হলেও এরা রেহাই পায় না নিষ্ঠুর শিকারিদের হাত থেকে। রসনাবিলাসিরা যদি একটু সংযত হন বোধ করি দেশের শিকরিরাই বিপাকে পড়ে যাবে এবং তারা পাখি শিকারে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। তাতে করে হ্রাস পাওয়া প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এ পাখির বাংলা নামঃ পাতারি হাঁস, ইংরেজি নামঃ কমন টিল, (Common teal), বৈজ্ঞানিক নামঃ আনাস ক্রেককা, (Anas crecca)। এরা ‘পাতি তিলিহাঁস’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সুন্দরী হাঁস •বৈকাল তিলিহাঁস •ফুলুরি হাঁস •বড় সাদাকপাল রাজহাঁস
•সরু ঠোঁট ডুবরি হাঁস •ঝুঁটি হাঁস •নাকতা হাঁস •পিয়ং হাঁস
•সাদা হাঁস •নীলশির হাঁস •লালশির হাঁস •ভাদি হাঁস
•মরচেরং ভূতিহাঁস •বালিহাঁস •উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস •পান্তামুখী হাঁস

লম্বায় ৩৪-৩৮ সেন্টিমিটার। ওজন ২৮০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির রঙ বদলায়। এ সময় এদের মাথার রঙ লালচে-বাদামি এবং শরীরে গুঁড়ি গুঁড়ি রেখা দেখা যায়। মাথার দু’পাশে লম্বা দুটি সাদা ডোরা। চোখের ওপর থেকে ঘাড় পর্যন্ত দেখা যায় চওড়া ধাতব-সবুজ পট্টি। ডানা কালো, ধাতব সবুজ ও হলদেটে। লেজের নিচের পালক হলুদাভ ছোপ। স্ত্রী পাখির রূপ নিষ্প্রভ। মাথার তালু ও ঘাড় কালচে-লালচের মিশ্রণ। উভয়ের চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা জলপাই-ধূসর। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির সঙ্গে মা পাখির বর্ণের খানিকটা মিল রয়েছে।

প্রধান খাবারঃ জলজ উদ্ভিদের কচিডগা ও বীজ। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট। জন্মভূমি সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের পাশের ভূমিতে শুকনো লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৮-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৩ দিন। শাবক উড়তে শিখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog