
সাদামাথা সাতভায়লা দেখতে অনেকটাই ‘ধলাঝুঁটি পেঙ্গা’ পাখির মতো। চেহারায় পার্থক্য নেই খুব একটা। পেঙ্গাদের খাড়া ঝুঁটি এবং চোখের নিচে কালো চওড়া টান থাকে। অন্যদিকে সাদামাথা সাতভায়লার ঝুঁটি নেই, নেই চোখের নিচের কালো টানও। এ ছাড়া বাদবাকি দেখতে একই রকম। নবীন পাখি দেখিয়েদের পক্ষে প্রজাতি শনাক্তকরণ বেশ দুরূহ। প্রজাতিটি দেশের স্থায়ী বাসিন্দা। দেখা মেলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বা ক্রান্তীয় আর্দ্র নিম্নভূমির বন এবং পার্বত্য অরণ্যে। বাঁশবন কিংবা সুচালো চিরহরিৎ বনে বেশি দেখা যায়।
এ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনের ইউনান প্রদেশে। বিচরণ করে একাকী, জোড়ায় কিংবা দলবদ্ধভাবে। দলের যে কারও ডিম-বাচ্চা ফুটলে শাবকের যত্নআত্তি নেয় সবাই মিলে। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। ভালো উড়তে পারে না। স্বভাবে চঞ্চল অস্থিরমতির হলেও অন্য সব ছোট প্রজাতির পাখির সঙ্গে মিলেমিশে বিচরণ করতে দেখা যায়। নিয়মিত গোসল করে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। এদের অবস্থান বিশ্বে তত সন্তোষজনক নয়, ফলে আইইউসিএন এদের বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পাখির পুরো বাংলা নামঃ সাদামাথা সাতভায়লা, ইংরেজি নামঃ হোয়াইট হুডেড ব্যাবলার (White-hooded Babbler), বৈজ্ঞানিক নামঃ Gampsorhynchus rufulus | এরা ‘ধলামুখোশ ছাতারে’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•সাতভায়লা পাখি
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ২৩-২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৩৭-৪৯ গ্রাম। মাথা, মুখ ও গলা ধবধবে সাদা। ঘাড় বাদামি। পিঠ ও লেজ মসৃণ বাদামি। দেহের তুলনায় লেজ খানিকটা লম্বা। ডানার প্রান্ত পালকে গাঢ় বাদামির সঙ্গে সাদা-কালো সামান্য টান। বুকের নিচ থেকে ক্রিম সাদা। ঠোঁট বাদামি কালো, খাটো, মজবুত। চোখের বলয় সাদা-বাদামি, মণি বাদামি। পা ত্বক বর্ণ। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ, ফুলের মধু। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল-আগস্ট। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২ মিটার উপরে ঝোপ জঙ্গলের ভিতর। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চিকন কাঠি, শ্যাওলা, শৈবাল ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৬ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।