মেটে কাঠ ময়ূর বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। চেহারা অন্যসব ময়ূরের মতো তত আকর্ষণীয় নয়। কালেভদ্রে দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ অরণ্যে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে ১৯৭৮ সালেও দেখা গেছে। হালে দেখা যাওয়ার নজির নেই। বাংলাদেশ ছাড়াও প্রজাতির বিস্তৃতি ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ও চীন পর্যন্ত।
এতদাঞ্চলের আর্দ্র ঘন চিরসবুজ অরণ্য এদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। বনতলের ঝোপজঙ্গলে কিংবা বনপ্রান্তে এমনকি খোলা মাঠেও এরা বিচরণ করে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় সাধারণত জোড়ায় জোড়ায়। একাকী খুব কমই দেখা যায়। গৃহপালিত মোরগ-মুরগির মতো মাটিতে আঁচড় কেটে কীটপতঙ্গ বের করে খায়। খাদ্যের সন্ধান পেলে পুরুষ পাখি ‘অক-কক-কক-কক-’ সুরে আওয়াজ করে স্ত্রী পাখিকে কাছে ডেকে নিয়ে আসে। প্রজাতির সংখ্যা বিশ্বে সন্তোষজনক নয়। তবে গত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা হ্রাস পেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি। যার ফলে আইইউসিএন প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদযুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে। এরা বাংলাদেশে মহাবিপন্নের তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত রয়েছে।
পাখির বাংলা নামঃ মেটে কাঠ ময়ূর, ইংরেজি নামঃ গ্রে পিকক-ফেজেন্ট, (Grey Peacock-Pheasant), বৈজ্ঞানিক নামঃ Polyplectron bicalcaratum | এরা ‘মেটে কাঠমৌর’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•জলময়ূর
•দেশি ময়ূর
•সবুজ ময়ূর
•কালি ময়ূর
লম্বায় ৫৬ সেন্টিমিটার (লেজ ৩১ সেন্টিমিটার)। দেহের তুলনায় লেজ অনেক বড়। ওজন ৭৩০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে খানিকটা তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথায় পীতাভ খাড়া পালক। ঘাড় বাদামি-পীতাভ। পিঠ ধূসর-বাদামি, তার ওপর বেগুনি-সবুজ চক্র যা লেজেও রয়েছে। থুতনি-গলা সাদাটে। দেহের নিন্মাংশে সাদা ডোরা। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য খাটো। এদের মাথার চুড়াও খাটো। ডানায় এবং লেজে অস্পষ্ট চক্র। উভয়ের চোখের চারপাশ হলুদাভ চামড়ায় আবৃত। ঠোঁট পীতাভ বর্ণের। ঠোঁটের অগ্রভাগ ও মধ্যভাগ কালো। পা ও পায়ের পাতা কালচে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রী পাখিদের মতো।
প্রধান খাবারঃ শস্যদানা, ফল, পোকামাকড় ও ছোট শামুক। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। ঝোপের ভেতর মাটির প্রকৃতিক গর্তে নরম খড়কুটো দিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ দিন। ডিম ফুটে ছানা বের হয়েই মায়ের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে ছুটে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।