ছোট হরিয়াল | Pompadour Green Pigeon | Treron pompadora

276
ছোট হরিয়াল
ছোট হরিয়াল | ছবি: ইন্টারনেট

ছোট হরিয়াল বিরল দর্শন আবাসিক পাখি। বেশ তাগড়া, গাঁট্টাগোট্টা গড়ন। দেখতে অনেকটাই কবুতরের মতো। সুদর্শনও বটে। একসময় দেশের চিরহরিৎ বনাঞ্চলে প্রচুর দেখা যেত। হালে আর সেভাবে নজরে পড়ে না। ওদের বিচরণ ক্ষেত্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উঁচু গাছের চিরসবুজ বনের পত্রপল্লবের আড়ালে। বিচরণ রয়েছে মিশ্র পর্ণমোচী অরণ্যেও। স্বভাবে খানিকটা লাজুক ও শান্ত। গায়ে পড়ে স্বগোত্রীয় বা অন্য গোত্রীয় কারো সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় না। লাজুক বিধায় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। জোড়ায় বা একাকী খুব কম দেখা যায়।

পাখিটির বাংলা নামঃ ছোট হরিয়াল। সবুজ পায়রা নামেও পরিচিত | ইংরেজি নামঃ পম্পাদুর গ্রিন পিজিয়ন, (Pompadour Green Pigeon) এবং বৈজ্ঞানিক নামঃ Treron pompadora |

আরো পড়ুন…
•রাজ হরিয়াল •ল্যাঞ্জা হরিয়াল •লেজচোখা হরিয়াল
•ঠোঁট মোটা হরিয়াল •কমলাবুক হরিয়াল •হলুদ পা হরিয়াল

ওদের প্রধান ও পছন্দের খাবার ডুমুর ও বট-পাকুড়ের ফল। অন্য ছোট ফলফলাদিও খায়। বিশেষ করে ডুমুর বা বট-পাকুড় ফল পাকলে ওরা ঝাঁক বেঁধে খেতে আসে। কোনো রকম বাধা বা বিরক্তির শিকার না হলে ফি বছর একই গাছে ফল খেতে আসে।

রোদ পোহাতে খুব পছন্দ করে ওরা। ভোরের দিকে পাতাঝরা গাছের মগডালে ঝাঁক বেঁধে বসে রোদ পোহাতে দেখা যায়। বৃক্ষচারী বিরল প্রজাতির এই পাখি পানি পানের প্রয়োজন ব্যতিরেকে মাটিতে খুব একটা নামে না। প্রজনন ঋতুতে সুরেলা কণ্ঠে গান গায়। কণ্ঠস্বরও সুমধুর। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব ভারত, শ্রীলঙ্কা, পূর্ব ফিলিপাইন ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত।

প্রজাতিটি বাংলাদেশে বিরল দর্শন হলেও বিশ্বব্যাপী কিন্তু হুমকি নয়, বিপদমুক্ত। ছোট হরিয়াল দৈর্ঘ্যে ২৫ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল ধূসরাভ। মাথা সবুজাভ-হলুদ। ঘাড়ে হালকা ধূসরাভ পট্টি। পিঠ ও ডানা গাঢ় দারুচিনি রঙের। ডানার প্রান্ত পালক হলুদাভ-সবুজ। সঙ্গে কালো খাড়া মোটা টান। সবুজ বুকে ফ্যাকাশে কমলা প্যাঁচ। লেজতল লালাভ। স্ত্রী পাখির কপালে ও ঘাড়ে ধূসরাভ পট্টি নেই। পিঠ-গাঢ় সবুজ। উভয়ের ঠোঁট সবুজাভ-ধূসর। চোখ হালকা নীলাভ। পা গোলাপি লাল।

প্রজনন মৌসুম ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। অঞ্চল ভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের দেখা যায়। গাছের পত্রপল্লভের আড়ালে লতাপাতা, চিকন কাঠি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে দুটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৬ থেকে ১৮ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog