রুপালি বুক গোদা ঠোঁটি মনোহরণকারী রূপ। গোবেচারা টাইপ। স্বভাবেও শান্ত। রূপের ঝলকে প্রথম দর্শনেই পাখিপ্রেমীরা মুগ্ধ হতে বাধ্য। দূরদর্শনে ভিন্নরূপ, পটচিত্র মনে হতে পারে। বাংলা নামটা বেখাপ্পা। রূপের সঙ্গে সঙ্গতি নেই। বাংলা নাম ‘রুপালি বুক গোদা ঠোঁটি’।
বিশ্বে মোট ১৪ প্রজাতির গোদা ঠোঁটি পরিবারের বাস। এর মধ্যে বাংলাদেশে সাক্ষাৎ মেলে দুই প্রজাতির। এ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত এরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র নিুভূমির বন বা আর্দ্র পাহাড়ি অরণ্যে বিচরণ করে। লোকালয়ে খুব একটা আসে না। একাকী কিংবা জোড়ায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। ভূরিভোজন শেষে চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। চলাফেরায় যথেষ্ট সতর্ক, সামান্য সন্দেহ হলে নড়েচড়ে বসে।
এ পাখির বাংলা নামঃ রুপালিবুক গোদা ঠোঁটি, ইংরেজি নামঃ সিলভার ব্রেস্টেড ব্রডবিল, (Silver-breasted Broadbill), বৈজ্ঞানিক নামঃ Serilophus lunatus | এরা ‘চাঁদিবুক মোটাঠুঁটি’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•লেজ ঝোলা গোদা ঠোঁটি
এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫-৩৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন পার্থক্য নেই। দেখতে একই রকম। পার্থক্য শুধু স্ত্রী পাখির বুকের দিকে সরু রুপালি দাগ। বাদবাকি একই রকম, যা পাখি বিশারদ ব্যতীত সাধারণ পাখি দেখিয়েদের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। উভয়ের কপাল ছাই-ধূসর। মাথার শেষভাগ থেকে ঘাড় পর্যন্ত কুচকুচে কালো। পিঠ ও ডানা (পিঠের দিকের অংশ) মরিচ লাল। বাহু কালো। নিচের দিকে ধূসর নীল। শেষের দিকটা কালো। ওড়ার পালক নীল-কালো। লেজের উপরিভাগ কালো, দুই পাশে সাদা পালক। গলা, বুক ও পেট রুপালি সাদা। ঠোঁট মোটা ধূসর-নীলাভ। ঠোঁটের অগ্রভাগ থেকে দুই পাশ সাদাটে। চোখের বলয় হলুদ। পা সবুজে-হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা কিছুটা ভিন্ন।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, শুককীট, ফড়িং ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম আগস্ট থেকে মার্চ। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে দুই মিটার উঁচুতে গাছের ঝুলে থাকা চিকন ডালে। ঝুলন্ত বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে কলাগাছের তন্তু, চিকন লতা এবং শুকনো ছোট পাতা। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটতে সময় ১৫-১৮ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।