স্থানীয় প্রজাতির জলচর পাখি ‘ছোট মদনটাক।’ আকারে বড় (বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রজাতির পাখি) এ প্রজাতির জ্ঞাতি ভাই হচ্ছে হাড়গিলা, মানিকজোড়, শামুকভাঙা, কালাজাং ও লোহারজাং। এদের কেউই আমাদের দেশে ভালো অবস্থানে নেই। মদনটাকের অবস্থাও তদ্রুপ, কোনো রকম বেঁচেবর্তে আছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও এদের সংবাদ শিরোনাম হতে হয়, ‘শিকারির গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে মদনটাক।’ আসলে অতিরিক্ত ওজনের কারণেই এরা বিপাকে পড়ে যায়। উড়তে খুব পারদর্শী হলেও শিকারিদের হিংস্রতা এবং কূটকৌশলের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। মাংসের লোভে শিকারিরা এদের পিছু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে জীবনাবসান ঘটায়। মদনটাক বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়। এ ছাড়াও ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলে দেখার নজির রয়েছে।
আমাদের দেশে দেখা মেলে সুন্দরবনাঞ্চলের নদ-নদী, উপকূলীয় নদীর মোহনা, বড় বিল-ঝিল কিংবা নির্জন নদীরচরে। দেখতে বিশাল দর্শন ভয়ঙ্কর মনে হলেও এরা আসলেই নিরীহ প্রজাতির পাখি। তবে একটু অহংকারী বটে। হাঁটে এক পা দু’পা ফেলে, বসে হাঁটু ভাঁজ করে। ভারিক্কি চালচলনই অহংকারীভাব ফুটে ওঠার প্রধান কারণ। মদনটাক পরিবেশের বন্ধু, পচাগলা খেয়ে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করলেও আমরা এদের বিপন্মুক্ত করতে পারিনি।
পাখির বাংলা নামঃ ছোট মদনটাক, ইংরেজি নামঃ লেসার অ্যাডজুট্যান্ট, (Lesser Adjutant), বৈজ্ঞানিক নামঃ লেপটপটিলোস জাভানিকাস, (Leptoptilos javanicus), গোত্রের নামঃ সিকোনিআইদি ।
লম্বায় ৮৭-৯৩ সেন্টিমিটার। পায়ের উচ্চতা ১১০-১২০ সেন্টিমিটার। ওজন চার থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোগ্রাম। মাথার তালু, কপাল, গলা পালকহীন। গলা লালচে-হলুদ চমড়ায় আবৃত। ঠোঁট শক্ত মজবুত, রং ময়লাটে হলুদ। প্রজনন মৌসুমে ঠোঁটের গোড়া লালচে হয়। পিঠ থেকে লেজ পর্যন্ত উজ্জ্বল ধাতব কালো। ডানার গোড়ায় কালো তিলা। লেজের প্রান্ত ময়লাটে সাদা। গলার নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদাটে। পা ও পায়ের পাতা স্লেট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথায় ও ঘাড়ে পালক দেখা যায়। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ মাছ, শামুক, ইঁদুর, ব্যাঙসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম জুন থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে গাছের উঁচুতে ডালপালা দিয়ে। বাসার আকার বড়সড়ো, অগোছালো। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৫০ দিনের মধ্যে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।