দাগি তামাপাপিয়া | Banded Bay Cuckoo | Cacomantis sonneratii

684
দাগি তামাপাপিয়া
দাগি তামাপাপিয়া | ছবিঃ উইকিপিডিয়া

স্থানীয় প্রজাতির হলেও বিরল দর্শন দাগি তামাপাপিয়া । দূর থেকে দেখতে কিছুটা ‘ইউরেশীয় ঘাড়ব্যথা’ পাখির মতো মনে হলেও প্রজাতি বা গোত্রভেদে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আবার আকারে সামান্য বড়ও এরা। যত্রতত্র দেখা যায় না। শুধু চিরসবুজ বনের গাছ-গাছালির মগডালে এবং বনের পাশের লোকালয়ে এদের বিচরণ। দেখা যায় আর্দ্র পাতাঝরা বনেও। সুমধুর সুরে গান গায়। ধৈর্য ধরে শুনলে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ঊষা এবং গোধূলিলগ্নে গাছের মগডালের পাতার আড়ালে বসে ‘পি-পি-পিউ-পিউ’ সুরে ডাকে। তখন ওদের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও সহজে নজরে পড়ে না। পাতার আড়ালে-আবডালে লুকিয়ে থাকে সবসময়।

বিচরণ করে একাকী, মাঝেমধ্যে জোড়ায় দেখা যায়। স্বভাবে খানিকটা হুঁশিয়ারি ও লাজুক বিধায় লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে পছন্দ করে দাগি তামাপাপিয়া। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশে এদের সংখ্যা তেমন সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নামঃ দাগি তামাপাপিয়া | ইংরেজি নামঃ বেন্ডেড বে কুক্কু (Banded Bay Cuckoo)| বৈজ্ঞানিক নামঃ Cacomantis sonneratii | এরা ‘বাদামি কোকিল’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•বেগুনি পাপিয়া •উদয়ী পাপিয়া •ছোট পাপিয়া
•পাতি পাপিয়া •করুণ পাপিয়া

এ প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের চেহারা ভিন্ন। ওদের মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছন দিক পীতাভ ডোরা। দেহের নিম্নাংশে প্রশস্ত এলোমেলো ডোরা। বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথা ও ঘাড়ের পাশ সাদা। চোখের ভ্রু সাদা। চোখের তারা বাদামি। কান ঢাকনি গাঢ় বাদামি। পিঠ কালচে এবং লালচে বাদামি মিশ্রণ ডোরা। লেজের পালক লালচে-বদামির ওপর ডোরা। দেহের নিম্নাংশে সাদাটে রঙের ঢেউ খেলানো ডোরা। ঠোঁট শিঙ-বাদামি, গোড়া জলপাই-ধূসর। পা ও পায়ের পাতা জলপাই-ধূসর।

প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়। তন্মধ্যে শুঁয়োপোকা ও ছারপোকার প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। নিজেরা বাসা বানাতে জানে না। বুলবুল, ফটিকজল কিংবা ছাতারে পাখির বাসায় চুপিচুপি ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।