পশ্চিমা পানকাপাসি উপমহাদেশীয় অঞ্চলে পরিযায়ী হয়ে আসে। দেখা মেলে শীত মৌসুমে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, সাইবেরিয়া, উত্তর মঙ্গোলিয়া, ফিলিপাইন, উত্তর-পূর্ব চীন, জাপান, তুরস্ক, মরক্কো, ইরাক ও ইরান পর্যন্ত।
এদের বিচরণ ক্ষেত্র ধানক্ষেত, গমক্ষেত, উন্মুক্ত বনভূমি, ছোট নদ-নদী, জলাশয়ের আশপাশ। এরা ক্ষেত খামারের ওপর চক্কর দিয়ে শিকার খোঁজে। একাকী কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে। অনেক সময় ছোট দলেও দেখা যায়। চেহারায় হিংস্রতার ছাপ লক্ষ্য করা গেলেও স্বভাবে তত হিংস্র নয়। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। মূলত শস্যক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এবং আবাসন সংকটের কারণে প্রজাতিটি হুমকির মুখে পড়েছে এবং প্রজননে বিঘœ ঘটছে। ফলে আইইউসিএন এদেরকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
পাখির বাংলা নামঃ পশ্চিমা পানকাপাসি, ইংরেজি নামঃ ওয়েস্টার্ন মার্স হ্যারিয়ার (Western marsh harrier), বৈজ্ঞানিক নামঃ Circus aeruginosus | এরা ‘জলার চিল’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•মুরগি কাপাসি
•পুবের পানকাপাসি
•মন্টেগুর কাপাসি
•পাকড়া কাপাসি
•ধলা কাপাসি
•ভুবন চিল
•শঙ্খচিল
প্রজাতিটি দৈর্ঘ্যে ৪৩-৫৪ সেন্টিমিটার। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখি আকারে বড় এবং গায়ের রঙও ভিন্ন। পুরুষ পাখির গড় ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম, স্ত্রী পাখির গড় ওজন ৮০০ গ্রাম। পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড় ফ্যাকাসে ধূসরাভ হলদে। পিঠ ও দেহতল লালচে বাদামি। স্ত্রী পাখির মাথার মুকুট ক্রীমসাদা। পিঠ চকোলেট বাদামি। দেহতল লালচে বাদামি। শিঙ কালো রঙে ঠোঁটের অগ্রভাগ বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের গোড়া সবজেটে। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলুদ, নখ কালো। যুবাদের রঙ ভিন্ন।
প্রধান খাবারঃ মাছ, ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ইঁদুর, বড় পোকামাকড়, ফড়িং ও পঙ্গপাল। প্রজনন সময় মধ্য মার্চ থেকে মে। প্রজনন পরিসীমা সাইবেরিয়ার জলাভূমির পাশে, উত্তর মঙ্গোলিয়া, উত্তর-পূর্ব চীন, জাপান ও মাঞ্চুরিয়া পর্যন্ত। বাসা বাঁধে ঝোঁপের ভেতর, জলাভূমির কাছে মাটিতে চিকন ডালপালা, নলখাগড়া, ঘাস দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩১-৩৮ দিন। শাবক ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যে উড়তে শেখে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।