স্থানীয় প্রজাতির পাখি। ভয়ঙ্কর দর্শন। গোলাকার চোখ। গোলাকার শারীরিক গঠনও। মাথার দু’পাশে ছোট্ট খাড়া ঝুঁটি। এক কথায় প্রজাতি দর্শনে বা শারীরিক গঠনে যে কেউ ভয় পেতে পারেন। ভয় পেতে পারেন ওদের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনেও। আসলে এরা নিরীহ গোত্রের পাখি। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো অত হিংস নয় ‘পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা’। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। চোখজোড়া প্রসারিত করে তাকিয়ে থাকে। ভয় পাওয়ার অবশ্য এটিও একটি কারণ হতে পারে। আদতে এরা ভীতু প্রকৃতির। পাহাড়ি এলাকায় বাস। লোকালয়ে খুব একটা দেখা যায় না। লোকালয়ে এলেও সেটি হতে হবে অবশ্যই পাহাড়ঘেরা অরণ্য। মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়। এ ছাড়াও পাহাড়ি পাইন বনে কিংবা নাতিশীতোষ্ণ পাহাড়ি এলাকায় দেখা মেলে।
বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, পূর্ব-ভারত (সিকিম), নেপাল (হিমালয়ের উত্তর অংশ), মিয়ানমার, দক্ষিণ-পূর্ব চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, সুমাত্রা ও মালয় উপদ্বীপ পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান সন্তোষজনক নয় বিধায় আইইউসিএন এদেরকে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে বিরল দর্শন। কালেভদ্রে দেখো মেলে। নিশাচর পাখি। মূলত রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে ওরা শিকারে বের হয়। পাহাড়ের বনজ এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। একাকি কিংবা জোড়ায় জোড়ায় গাছের ডালে বসে থাকে। মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে উড়ন্ত পোকামাকড়ের খোঁজ খবর নেয়। খোঁজ খবর নেয় ইঁদুর বা সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীরও। নাগালের ভেতর এলে কেবল ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর।
পাখির বাংলা নামঃ পাহাড়ি নিমপ্যাঁচা, ইংরেজি নামঃ মাউন্টেইন স্কোপ আউল, (Mountain Scops Owl), বৈজ্ঞানিক নামঃ Otus spilocephalus | এরা ‘লালচে নিমপোখ’ নামেও পরিচিত।
দৈর্ঘ্য কমবেশি ২০ সেন্টিমিটার। মাথার দু’পাশে কান আকৃতির ছোট ঝুঁটি। কপালে সাদা ছোপযুক্ত, কিছু কিছু স্থানে সাদা ফোঁটা। দেহের উপরাংশ শেয়াল-বাদামি রঙের চিত্রবিচিত্রিত। দেহের নিচের দিকে শেয়াল রঙের চিতির ওপর বাদামি রেখাযুক্ত। চোখের তারা উজ্জ্বল হলুদ। ঠোঁট খাটো, বাদামি রঙের। পায়ের আঙুল ফ্যাকাসে সাদাটে। পা পালকে আবৃত থাকে।
প্রধান খাবারঃ পাহাড়ি কীটপতঙ্গ, গোবরে পোকা, ইঁদুর, টিকটিকিসহ অন্যান্য সরীসৃপ। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে ৩-৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৩-২৫ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক লেগে যায়।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।