গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়নি তেমন একটা। কালেভদ্রে গেলেও বনবাদাড়ে ঘুরেই সময় কাটাই। বাড়ির আশপাশের গাছগুলোয় তীক্ষ দৃষ্টি রেখে পাখ-পাখালির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করি। তেমনি এক ছুটিতে গ্রামে গিয়ে রাতের আঁধারে ছেলেকে নিয়ে নিশাচর পাখির সন্ধানে বেরিয়েছি। গিয়েছি বাড়ির অদূরে একটি কাঠবনে। থমথমে আঁধারে অজানা আশঙ্কায় ছেলে ঘরে ফেরার তাগিদ দিচ্ছে বারবার। ঠিক ওই মুহূর্তে শুনতে পেলাম ‘চিকিক-চিকিক… চিরুর-চিরুর’ সুরের আর্তনাদ। পরিচিত সুর। থমকে দাঁড়িয়েছি তাই। আওয়াজ লক্ষ করে টর্চের আলো ছুড়ে দিয়েছি ওই দিকটায়। খুব বেশি দেরি হয়নি আওয়াজের উৎসস্থল খুঁজে পেতে।
হেলেপড়া একটি গাছের ডালে একজোড়া ‘কোটরে পেঁচা’ বসে আছে জড়সড় হয়ে। টর্চের আলো গায়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসছে দম্পতি। ডানা ঝাপটানোর আগেই আলো সরিয়ে ফেলেছি। যাতে বিরক্তবোধ না করে তা মাথায় রেখে দ্রুত স্থান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তার আগেই ওরা সটকে পড়েছে। প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ যে পাখির কথা বলেছি, খুবই পরিচিত পাখি ওরা। স্থানীয় প্রজাতির নিশাচর পাখি। দেশে সন্তোষজনক বিস্তৃতি রয়েছে। দেখতে হিংস মনে হলেও একেবারেই নিরীহ। দিনে বড় গাছের ঘন পাতার আড়ালে কিংবা গাছের কোটরে বা পুরনো দরদালানের ফোকরে লুকিয়ে থাকে। গেছোইঁদুর শিকার করে মানুষের প্রচুর উপকার করে। মানুষও ওদের বন্ধু ভাবে তাই। শিকারে বের হয় গোধূলিলগ্নে, চলে রাতভর। থাকে জোড়ায় জোড়ায়। একই স্থানে একজোড়া পাখি দীর্ঘদিন অবস্থান করে। বাসাও বাঁধে একই স্থানে বারবার।
পাখির বাংলা নামঃ কোটরে পেঁচা, ইংরেজি নামঃ স্পটেড আউলেট, (Spotted owlet), বৈজ্ঞানিক নামঃ অ্যাথিনি ব্রামা, (Athene brama)। গোত্রের নামঃ স্ট্রিগিদি । এরা ‘খোঁড়লে পেঁচা’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•খয়রা মেছো পেঁচা
•ডোরা কালিপেঁচা
•ছোটকান পেঁচা
•চিতিপেট হুতুমপেঁচা
•খাকি ভুতুম পেঁচা
•ভূমা পেঁচা
•খয়রা গাছপেঁচা
•উদয়ী নিমপেঁচা
•হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা
•কালো পেঁচা
•লক্ষ্মীপেঁচা
দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির পেঁচার দেখা মেলে। লম্বায় ৪৩ সেন্টিমিটার। গোলাকৃতির মুখ। মাথার তালুতে বাদামির ওপর ক্ষুদ্র সাদা ছিট। গলায় চওয়া বাদামি পট্টি। পিঠ, ডানা ও লেজ গাঢ় বাদামি। দেহতল সাদাটের ওপর আড়াআড়ি বাদামি রেখা যা ঠেকেছে লেজতলা পর্যন্ত। চোখের কোটর গোলাকার, চারপাশ সাদা। ঠোঁট সবুজাভ শিঙে। পা ও আঙুল হলদে সবুজ। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ ইঁদুর, গিরগিটি, পোকামাকড়, পাখির ছানা ও ছোট পাখি। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ। বাসা বাঁধে পুরনো গাছের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা পুরনো দরদালানের কোটরে। ডিম পাড়ে তিন-চারটি। ফুটতে সময় লাগে ৩৪-৩৬ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।