
শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভাত শালিক প্রজাতিটি সমগ্র এশিয়া মহাদেশেরই আবাসিক পাখি। কম-বেশি এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নজরে পড়ে। নজরে পড়ে ইউরোপ, আফ্রিকা কিংবা আমেরিকা মহাদেশেও। এমনকি দ্বীপ দেশসমূহেও দেখা যায়। দেখা যায়, হিমালয় পর্বতের ৩০০০ মিটার উঁচুতেও। প্রজাতিটি দেশের সকলের কাছেই পরিচিত। নাম ‘ভাত শালিক’। দেখা যায় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও। রাজধানীতেও দেখা যায় প্রচুর। গভীর অরণ্য এদের পছন্দ নয়। লোকালয়ের কাছেপিঠে থাকতে পছন্দ করে। বাড়ির আঙিনায় কিংবা অফিস-আদালতের বারান্দায়ও ভাত শালিকের আনাগোনা রয়েছে।
বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। একাকীও দেখা যায়, তবে আশপাশে থাকে জোড়ের পাখিটি। আবার ছোট দলেও এদের বিচরণ রয়েছে। জোড়া বাঁধে মৃত্যু অবধি। গাছ-গাছালির চেয়ে মাঠে-ঘাটে বেশি নজরে পড়ে। লাফিয়ে হাঁটে। কোলাহল এদের দারুণ পছন্দ। নিজেরাও কোলাহল করে সময় কাটায়। উচ্চকণ্ঠে ‘চিড়িক..চিড়িক..’ সুরে শিস দেয়। নিজেদের মধ্যে বচসা যেন লেগেই থাকে। ভয় পেলে একে অপরকে সতর্ক করে দেয় তাৎক্ষণিক। আবার সহজে পোষও মানে এরা। শেখালে কথাও বলতে পারে ভাত শালিক। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত।
পাখির বাংলা নামঃ ভাত শালিক, ইংরেজি নামঃ কমন ময়না, (Common myna), বৈজ্ঞানিক নামঃ Acridotheres tristis |
আরো পড়ুন…
•গো শালিক
•চিত্রা শালিক
•গোলাপি কাঠশালিক
•চিতিপাক গোশালিক
•কালো ঝুঁটি শালিক
•লাল চোখের কালো শালিক
•বেগুনি পিঠ শালিক
•ঝুঁটি শালিক
•গাঙশালিক
•কাঠ শালিক
লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। কেবলমাত্র আকারে সামান্য ছোট স্ত্রী পাখি। প্রাপ্তবয়স্কদের মাথা ও ঘাড় কালচে। পিঠ বাদামি। ডানার বাঁকানো অংশ সাদা, পরের অংশ কালো। লেজ কালো। বুকের অংশ কালো। পেটের দিক বাদামি। বস্তিপ্রদেশ সাদাটে। ওড়ার পালকে সাদা পট্টি দেখা যায়। ঠোঁট হলুদ, নিচের ঠোঁটের গোড়া হালকা বাদামি-সবুজ। চোখ বাদামি। চোখের নিম্নাংশে পালকহীন হলুদ চামড়া। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথা হালকা বাদামি-কালো। গলা ও বুক ফিকে বাদামি।
প্রধান খাবারঃ বলতে এদের কিছু নেই। মূলত এরা সর্বভুক পাখি। একবারে পোকামাকড় থেকে শুরু করে পচাগলা, ভাত, রুটি, ফুলের মধু সবই খায়। খেজুরের রস এদের খুব প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা দরদালানের ফাঁক-ফোকরে বাসা বাঁধে। শেকড়-বাঁকড়, কাগজ, দড়ি, প্লাস্টিক এমনকি সাপের খোলস দিয়েও বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০-২৫ দিনের মধ্যে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।