ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি | Little spiderhunter | Arachnothera longirostra

181
ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি
ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি | ছবি: ইন্টারনেট

ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি স্থানীয় প্রজাতির সুলভ দর্শন মায়াবী গড়নের ছোটখাটো আকৃতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ব্র“নাই ও থাইল্যান্ডে বিস্তৃতি রয়েছে। দেশে বেশি নজরে পড়ে লাউয়াছড়া বনে। এছাড়া গ্রামীণ জনপদেও দেখা মেলে। তবে যেখানেই দেখা যাক না কেন, ঝোপজঙ্গল এলাকাই ওদের পছন্দের তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান পায়। পাহাড়ি অরণ্যের কাছাকাছি এলাকা ওদের খুব প্রিয়। বিশেষ করে বুনো কলাগাছের ঝোপে খানিকটা বেশি দেখা যায়।

দুটি কারণেই এতদঞ্চলে ওদের আগমন ঘটে। প্রথমত, কলাগাছে ওদের প্রিয় খাবার মাকড়সার বাস। দ্বিতীয়ত, কলাগাছের চওড়া পাতার আড়ালে বাসা বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বেশি। অতি চঞ্চল প্রজাতির এ পাখি চোখের পলক ফেলার আগেই উধাও হয়ে যায়। কোথাও একদণ্ড বসার সুযোগ নেই ওদের। সাংঘাতিক ব্যতিব্যস্ত রাখে নিজেদের। স্থান পরিবর্তনকালে উড়ে যেতে যেতে ধাতব স্বরে আওয়াজ করে। কেবলমাত্র তখনই কিছুটা সময় লাগিয়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে এরা ভালো অবস্থানে রয়েছে। অতি চঞ্চল এবং আকৃতিতে ছোট হওয়ায় লুকিয়ে-চুকিয়ে থেকে শত্র“র চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম বিধায় সংখ্যায় সন্তোষজনক রয়েছে এরা। যার ফলে প্রজাতিটি দেশে বিপন্মুক্ত রয়েছে।

পাখির বাংলা নামঃ ছোট মাকড়সাভুক মৌটুসি, ইংরেজি নামঃ লিটল স্পাইডার হান্টার, (Little spiderhunter), বৈজ্ঞানিক নামঃ এ্যারকনোথেরা লংগিরোস্ট্রা (Arachnothera longirostra) | এরা ‘ছোট মাকড়মার’ ও ‘ক্ষুদে মাকড়সাভুক’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•সিঁদুরে মৌটুসি •লাললেজ মৌটুসি •বেগুনি গলা মৌটুসি
•জলপাই হলুদ মৌটুসি •সবুজ লেজি মৌটুসি •বেগুনি কোমর মৌটুসি
•সিঁদুরে হলুদ মৌটুসি •চুনিমুখী মৌটুসি

প্রজাতিটি লম্বায় ১৬ সেন্টিমিটার। তন্মধ্যে ঠোঁট ৩.৪ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত জলপাই সবুজ। লেজের ডগায় সাদা ছোপ। গলা থেকে বুক পর্যন্ত ধূসর-সাদা। বুকের নিচ থেকে লেজতল পর্যন্ত উজ্জ্বল হলুদ। লম্বা ঠোঁট নিচের দিকে বাঁকানো। চোখ গাঢ় বাদামি। পা ও পায়ের পাতা নীলাভ সিসা রঙের। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ মাকড়সা। এছাড়াও ছোট পোকামাকড় খায়। ফুলের মধুর প্রতিও ওদের লোভ রয়েছে। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের ঘটে। বাসা বাঁধে চওড়া পাতার উল্টো দিকে। তুলনামূলক বুনো কলা পাতার তলার দিকে বেশি বাসা বাঁধে। বাসার আকার অনেকটাই সুড়ঙ্গাকৃতির। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog