ঝুঁটি শালিক | Jungle Myna | Acridotheres Fuscus

367
ঝুঁটি শালিক
ঝুঁটি শালিক | ছবি: ইন্টারনেট

দক্ষিণ এশিয়ার আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক । ময়না পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। মাথার ঝুঁটি বাদ দিলে দেখতে হুবহু ভাত শালিকের মতোই। আকারে আকৃতিতে একই রকম হলেও রঙে সামান্য তফাৎ রয়েছে। আমাদের দেশে যততত্র নজরে পড়া পাখিদের মধ্যে ‘ঝুঁটি শালিক’ অন্যতম। দেখা যায় গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলেও। রাজধানীতেও দেখা যায় কম-বেশি। গভীর জঙ্গল এদের তেমন পছন্দ নয়। লোকালয়ের কাছেপিঠে থাকতে পছন্দ করে। বাড়ির আঙিনায় যথেষ্ট আনাগোনা রয়েছে ঝুঁটি শালিকের। চাষ দেয়া জমিতে ঘুর ঘুর করে শুঁয়োপোকা, কেঁচো খুঁজে বেড়ায়। আচরণ কিংবা স্বভাবে ভাত শালিকের মতোই।

বেশির ভাগই জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। একাকীও দেখা যায়, তবে আশপাশে থাকে জোড়ের পাখিটি। আবার ছোট দলেও এদের বিচরণ রয়েছে। জোড়া বাঁধে মৃত্যু অবধি। গাছ-গাছালির চেয়ে মাঠে-ঘাটে বেশি নজরে পড়ে। হাঁটে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোলাহল এদের দারুণ পছন্দ। নিজেরাও কোলাহল করে সময় কাটায়। উচ্চকণ্ঠে শিস দেয়। কিচিরমিচির করে করে কাটায় সারাক্ষণ। নিজেদের মধ্যে সর্বক্ষণ ঝগড়া যেন লেগেই থাকে। আবার ভয় পেলে একে অপরকে সতর্ক করে দেয় তাৎক্ষণিক। গবাদিপশুর সঙ্গে এদের দারুণ সখ্য রয়েছে। মাঠে চরারত গবাদিপশুর গায়ে উঠে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। ভাত শালিকের মতো এরাও সহজে পোষ মানে। শেখালে কথাও বলতে পারে ঝুঁটি শালিক।

পাখির বাংলা নামঃ ঝুঁটি শালিক, ইংরেজি নামঃ জংলি ময়না, (Jungle Myna), বৈজ্ঞানিক নামঃ Acridotheres Fuscus। বাংলাদেশে মোট ১১ প্রজাতির শালিক নজরে পড়ে।

আরো পড়ুন…
•গো শালিক •চিত্রা শালিক •গোলাপি কাঠশালিক
•চিতিপাক গোশালিক •কালো ঝুঁটি শালিক •লাল চোখের কালো শালিক
•বেগুনি পিঠ শালিক •ভাত শালিক •গাঙশালিক •কাঠ শালিক

লম্বায় ২২-২৩ সেন্টিমিটার। মাথা কালো। দেহের ওপরের পালক ধূসর ছাই রঙের। ডানার প্রান্ত পালকে রয়েছে কালোর ওপরে সাদা টান। লেজ কালো। তলদেশ সাদা। লেজের প্রান্ত পালক সাদা। দেহতল ধূসর পাটকিলে। ঠোঁট হলুদ। ঠোঁটের গোড়ায় খাড়া ঝুঁটি। চোখের মণি হলুদ। পা ও পায়ের পাতা কমলা হলুদ।

মূলত এরা সর্বভুক পাখি। পোকামাকড় থেকে শুরু করে ভাত, রুটি, ফুলের মধু সবই খায়। খেজুরের রস এদের খুব প্রিয়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা দরদালানের ফাঁক-ফোকরে বাসা বাঁধে। শেকড়-বাকড়, কাগজ, দড়ি, প্লাস্টিক এমনকি সাপের খোলস দিয়েও বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২০-২৫ দিনের মধ্যে।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।