সামাজিক পাখি। ছোট-বড় দলে বিচরণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্র, কানাড, মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি, পেরু ইত্যাদি অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। বাংলাদেশে এদের বিস্তৃতি অনেকটাই কম। এক সময়ে দেশে প্রচুর দেখা যেত। বর্তমানে কিছুটা অসুলভ বলা যায়। তবে প্রজাতির অন্যদের ক্ষেত্রে সুলভ দর্শন। শীতের শুরুতেই দেশের বিভন্ন জলাশয়ে আশ্রয় নেয় এরা। দিনের চেয়ে রাতে শিকার ধরতে পছন্দ করে বেশি। এরা যত না দ্রুত উড়তে পারে তারচেয়ে বেশি ডুব সাঁতারে পারঙ্গম।
ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ ঘুঙুরের মতো লাগে। যেখানে বিশ্রাম নেয় সেখানেই মুখরিত করে রাখে ‘সি সিক-সি সিক’ আওয়াজে। বছরখানেক আগে শীতের মাঝামাঝি সময় ছেলে রাইনকে নিয়ে বিক্রমপুরে অবস্থিত রাজা বল্লাল সেনের দিঘিরপাড়ে গিয়েছি ‘ছোট সরালি’ পাখির ছবি তুলতে। বেশ কিছু ছবি তুলেছিও আমরা, সঙ্গে ভিডিও চিত্রও ধারণ করেছি। ক’দিন পরে সে চিত্র কম্পিউটার মনিটরে রাখতেই নজরে পড়েছে ‘বড় সরালি’ পাখির ছবি। শনাক্ত করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে, কারণ বড়-ছোট প্রজাতির মধ্যে তফাত খুব বেশি নেই। পরখ করে না দেখলে সহজে চেনা যায় না। সাধারণ পাখি দেখিয়েদের পক্ষে প্রজাতি শনাক্তকরণ কিছুটা কঠিন বৈকি।
এদের বাংলা নামঃ বড় সরালি, ইংরেজি নামঃ ফালভাস হুইসলিং ডাক, (Fulvous whistling duck), বৈজ্ঞানিক নামঃ ডেনড্রসাইগ্না বাইকলার, (Dendrocygna bicolor), গোত্রের নামঃ আনাটিদি ।
এ পাখি লম্বায় ৪৪-৫১ সেন্টিমিটার। ওজন ৫৯৬-৯৬৪ গ্রাম। গলা লম্বা, হালকা বাদামি। গলার মাঝ বরাবর মরচে রঙা সাদাটে পট্টি। ডানা কালচে বাদামির ওপর লালচে পালকের সারি। এ ছাড়া শরীরের অধিকাংশটা লালচে বাদামি। লেজ সাদা। পা কালচে ধূসর। ঠোঁট গাঢ় ধূসর। ঠোঁটের অগ্রভাগ ত্রিভূজাকৃতির। চোখের মনি কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ জলজ উদ্ভিদের কচি ডগা, ছোট মাছ, ছোট ব্যাঙ ও ধান। প্রজনন সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে কিংবা কাক-চিলের পরিত্যক্ত বাসায় ঘর বাঁধে। ডিম পাড়ে ৬-১২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৪-২৬ দিন। শাবক ৬৩ দিনের মাথায় উড়তে শিখে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।