পাখি প্রথম দর্শন ঘটে মেঘনায় নৌবিহারকালে। নদীর কিনারে কাদামিশ্রিত এলাকায় শিকার খুঁজছে অনেক পাখি দলবদ্ধ হয়ে। কেউ পায়চারি করছে আপন মনে, কেউ গলা উঁচিয়ে দেখছে আগন্তুকদের হাবভাব। এসবই কিন্তু দেখা হচ্ছে দূর থেকে বাইনোকুলারে চোখ রেখে। স্বল্প সময়ের পর্যবেক্ষণেই ওদের জাত নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্বের ধারণাটা কাজে লাগিয়েছি সেই দিন, ফলে সহজ হয়ে গেছে এদের পরিচিতি লাভ। এ পাখি একটা সময়ে প্রচুর দেখা যেত আমাদের দেশে। খুব বেশি এখন আর নজরে পড়ছে না। স্বভাবে পরিযায়ী এরা। উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমাদের দেশে চলে আসে। আশ্রয় নেয় জোয়ার-ভাটা হয় এমন নদ-নদীর কিনারে। বিচরণ করে ছোট কিংবা বড় দলেও। শিকারের জন্য বেছে নেয় কাদামাটি এলাকা এবং বালুকারাশিতে খুঁজে বেড়ায় ভূমিজ কীট।
পাখির বাংলা নামঃ কালো লেজ জৌরালি, ইংরেজি নামঃ ব্লাক টেইল্ড গডউইট, (Black Tailed Godwit), বৈজ্ঞানিক নামঃ লিমোসা লিমোসা, (Limosa limosa), গোত্রের নামঃ স্কোলোপাসিদি ।
লম্বায় পুরুষ পাখি ৪১ সেন্টিমিটার, স্ত্রী পাখি ৫০ সেন্টিমিটার (১০ সেন্টিমিটার লম্বা ঠোঁটসহ)। ঠোঁটের গোড়া লালচে, ডগা কালচে। মাথা, ঘাড়, বুক লালচে-বাদামি। পিঠ কালচে-বাদামি ফোঁটাযুক্ত। ডানার ওপরে রয়েছে সাদা মোটা ডোরা যা উড়লে নজরে পড়ে। ডানার নিচের অংশ বেশিরভাগই সাদা। বুকের কাছ থেকে লেজের নিচ পর্যন্ত সাদা। লেজ খাটো, কালো। পা লম্বা, ধূসর-সবুজাভ। চোখের বলয় হলদেটে। ভ্রƒ সাদাটে। প্রজননের সময় রঙ বদলায়। এই সময় মাথা থেকে বুক লালচে এবং পেটের সাদা অংশ কালচে দেখায়।
প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের বীজ এবং ভূমিজ কীটও খায়। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজ বাসভূমিতে ফিরে বাসা বাঁধে। মাটির খোড়লে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটতে সময় লাগে ২২-২৪ দিন। শাবক উড়তে শেখে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।