বড় গুলিন্দা | Eurasian Curlew | Numenius arquata

681
eurasian-curlew
বড় গুলিন্দা | ছবি: তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব

সুলভ দর্শন পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের পরিযায়ী)। আমাদের দেশে প্রচণ্ড শীতে আগমন ঘটে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে। ফিরে যায় এপ্রিলের প্রথম দিকেই। দেশে ফিরেই সংসারী হয় ওরা। আমাদের দেশ সাধারণত বিচরণ করে কাদা-বালিময় সমুদ্র সৈকতে। এ ছাড়াও নদ-নদীর মোহনায়, ম্যানগ্রোভ অরণ্যের পাশঘেঁষা জলাশয়ে কিংবা জোয়ার-ভাটা হয় এমন স্থানেও এদের বিচরণ রয়েছে। এরা লোনা-মিঠা উভয় ধরনের জলেই বিচরণ করে। দিবাচর পাখি। গোধূলিলগ্নের পূর্বেই শিকারে বিরতি টানে। বেশির ভাগই একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় শিকারে বের হয়।

অদ্ভুত গড়নের লম্বা ঠোঁটটি নরম মাটি কিংবা পাথরের নিচে ঢুকিয়ে পোকামাকড় বের করে আনে। গর্তের ভেতর থেকে বের করে আনে ছোট ছোট কাঁকড়া। স্বভাবে হিংস্র নয়। সৈকতচারী অন্য প্রজাতির পাখিদের সঙ্গেও ঘুরেফিরে খাবার খায়। ডাকে মিষ্টি সুরে। উড়তে উড়তে ডাকে ‘ক্লু-ইট, ক্লু-ইট, কুউর-লিই, কার লিউ।’ ইংরেজি নামের শেষাংশের সঙ্গে ওদের ডাকের শেষাংশের হুবহু মিল রয়েছে। তাই অনেকে মনে করেন ‘কারলিউ’ শব্দ থেকে ইংরেজি নামের সূচনা হয়েছে। প্রজাতিটি আমাদের দেশে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তার প্রধান কারণ শিকারি দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে না এরা।

এ পাখির বাংলা নামঃ বড় গুলিন্দা, ইংরেজি নামঃ ইউরেশিয়ান কারলিউ, (Eurasian Curlew), বৈজ্ঞানিক নামঃ ন্যুমেনিয়াস আরকোয়াট, (Numenius arquata), গোত্রের নামঃ স্কোলোপাসিদি । এরা কারলিউ বা ‘ইউরেশীয় গুলিন্দা’ নামেও পরিচিত। আবার অনেকের কাছে ‘চোপ্পা’ নামে পরিচিত। দেশের বিশিষ্ট প্রাণী বিজ্ঞানী ড. রেজা খান প্রণীত ‘বাংলাদেশের পাখি’ গ্রন্থে পাখিটিকে ‘বড় গুলিন্দা’ নামে অভিহিত করেছেন।

প্রজাতিটি লম্বায় ৫৮-৬০ সেন্টিমিটার এবং ঠোঁট ১৭ সেন্টিমিটার। ঠোঁট অস্বাভাবিক লম্বা, নিচের দিকে বাঁকানো। মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত হালকা বাদামি, তার ওপর কালো ডোরা দাগ। তবে পিঠের অংশ সাদাটে। ডানার নিচটা সাদা। দেহতল সাদা, রেখাযুক্ত। লম্বা পা ও আঙ্গুল ধূসর। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।

প্রধান খাবারঃ ছোট মাছ, ছোট কাঁকড়া, পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলের জলাশয়ের আশপাশের মাটিতে। সামান্য ঘাস-লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।