নীলাঞ্জনা পাখি নামটির ভেতর চমৎকার একটি সাহিত্যবোধ লুকিয়ে রয়েছে। পাখিটি লম্বায় ৮-১০ ইঞ্চি। আকৃতি শালিকের মতো। পিঠের পালক রূপালি নীলচের ওপর সাদা বুটির মতো কাজ করা। মাথাটা নীলচে কালো। ডানা ঝকঝকে নীল। কনীনিকা কালো, ঠোঁট হলুদ, পা ও আঙুল ছাই কালো। তুলনামূলকভাবে পা একটু লম্বা। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।এগুলোর মূল বাসভূমি উত্তর বেলুচিস্তানের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত। প্রচণ্ড শীতে এগুলো হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আমাদের দেশে চলে আসে।
পাখিটির ইংরেজি নামঃ বুলু হুইসলিং থ্রাস (Blue whistling thrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ মাইওফোনাস সারুলিয়াস (Myophonus caeruleus) গোত্রের নামঃ মুস্কিকাপিদি। এ পাখিটির বাংলা আদি কোনো নাম নেই। আমাদের দেশের পাখি গবেষকরা নাম দিয়েছেন ‘নীলাঞ্জনা পাখি’।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, যা এ অঞ্চলে প্রচুর পাওয়া যায়। ফলে এগুলো এ দেশেই বেশি সময় কাটিয়ে দেয়। শুধু প্রজননের সময় হিমালয় অঞ্চলে চলে যায়। প্রজননকাল এপ্রিল-জুন। এ সময় পুরুষ পাখিটি সকাল-সন্ধ্যা হুইসেলের মতো শব্দ করে স্ত্রী পাখির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। জুটি বাঁধার পর পাহাড়ি জলাধারের কাছাকাছি গাছের ডালে পেয়ালা আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৩টি। বাচ্চা ফুটতে সময় নেয় ১৮-২০ দিন। বাচ্চা স্বাবলম্বী হলে পুরুষ পাখিটি আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তী প্রজনন মৌসুম পর্যন্ত একা একা বিচরণ করে। পরের বছর অন্য স্ত্রী নীলাঞ্জনার সঙ্গে সংসার পাতে। গান গেয়ে মজাতে পারলে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে ঘর বাঁধার অনুমতি মেলে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।