ধূসর দামা পরিযায়ী, ভূচর পাখি। উপমহাদেশীয় অঞ্চলে শীতে দেখা যায়। তবে এতদাঞ্চলে প্রজনন ঘটায় না। চেহারা তত আকর্ষণীয় নয়। প্রাকৃতিক আবাসস্থল মিশ্র পর্ণমোচী ও সুঁচালো পার্বত্য বন। পাইন বনে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বিচরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। গানের গলা ভালো। গাছের উঁচু ডালে বসে খুব ভোরে এবং গোধূলিলগ্নে গান গায়। স্বভাবে লাজুক। বেশির ভাগই একাকী বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। দেখা যায় লতাগুল্মের নিচেও।
আবার পাথুরে এলাকায়ও বিচরণ রয়েছে। পরিত্যক্ত বা স্যাঁতস্যাঁতে এলাকার লতাপাতা উল্টিয়ে এবং ঘন ঘন ঠোঁট চালিয়ে খাবার খোঁজে। গাছের উঁচুতে বিচরণ করে না। দেশের সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। শীতে দেখা যায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তান ও মিয়ানমার পর্যন্ত। বিশ্বব্যাপী হুমকি না হলেও প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত।
প্রজাতির বাংলা নামঃ ধূসর দামা, ইংরেজি নামঃ টিকেল’স থ্রাস’ (Tickell’s Thrush), বৈজ্ঞানিক নামঃ Turdus unicolor | এরা ‘টিকেলের দামা’ নামেও পরিচিত। দেশে প্রায় ১৫ প্রজাতির দামা নজরে পড়ে।
আরও পড়ুন…
•কমলাদামা
•নীল শিলাদামা
•কালচে দামা
•লালগলা দামা
•ধূসর ডানা কালো দামা
•সাদাভ্রু দামা
•লম্বাঠোঁটি দামা
•কালোবুক দামা
•সাদাঘাড় কালো দামা
গড় দৈর্ঘ্য ২০-২৫ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৫৮-৭৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। দেহের ওপরের অংশ ধূসর। অনেকটাই গাঢ় ছাই বর্ণের। কেবল গলায় সামান্য সাদাটে দাগ। গলার নিচ থেকে পেট পর্যন্ত ফ্যাকাসে ধূসর। লেজতল সাদাটে। চোখের বলয় হলুদ, মনি কালো। ঠোঁট হলুদ। পা ও পায়ের আঙুল হলুদ। যুবাদের রঙ ভিন্ন। শীত-গ্রীষ্মে রঙ বদলায়।
প্রধান খাবারঃ কেঁচো, পোকামাকড়। মাঝেমধ্যে ছোট ফলফলাদি খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে ২-৭ মিটার উঁচুতে। গভীর কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শৈবাল, শুকনো ঘাস ও লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় ১৪-১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।