সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা | Streak breasted Woodpecker | Picus viridanus

471
সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা
সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট

সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা বিরল আবাসিক পাখি। দেখা মেলে প্যারাবনে, চিরসবুজ বন, এবং উপকূলীয় এলাকার ঝোপ-জঙ্গলে। দেশে দেখা মেলে সুন্দরবনাঞ্চলে। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। খাদ্যের সন্ধানে পতিত কাঠের গুঁড়িতে লাফিয়ে লাফিয়ে পোকামাকড় খোঁজে। হাঁটেও লাফিয়ে লাফিয়ে। গাছের খাঁড়া কাণ্ডের বাকল জড়িয়ে ধরে তরতরিয়ে ওপরে উঠতে পারে। দিনের বেশিরভাগ সময় গাছে গাছেই কাটিয়ে দেয়। ভয় পেলে গাছের কাণ্ড জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকে। স্বভাবে শান্ত।

বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমার থেকে মালয় পেনিনসুলায় পর্যন্ত। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত নয়। বিচরণকালীন সময় জোড়ের পাখির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ‘কিউপ..কিউপ..’ সুরে ডেকে। প্রজননকালীন সময় হাঁকডাক বেড়ে যায়। এ সময় পুরুষ পাখি গাছের ফাঁপা ডালে ঠোঁট দিয়ে আঘাত করে স্ত্রী পাখিকে সুর বাজিয়ে শোনায়।

পাখির বাংলা নামঃ সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা, ইংরেজি নামঃ স্ট্রিক ব্রেস্টেড উডপেকার, (Streak breasted Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নামঃ Picus viridanus | এরা ‘দাগিবুক কাঠকুড়ালি’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•মেটেমাথা কাঠকুড়ালি •কলজেবুটি কাঠকুড়ালি •পাকড়া কাঠঠোকরা
•হলুদগলা কাঠঠোকরা •তামাটে কাঠকুড়ালি •ধলামাথা কাঠকুড়ালি
•ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা •খয়রা কাঠকুড়ালি •হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি
•বড় কাঠঠোকরা

দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১০০ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির কপাল ও চাঁদি উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী পাখির কপাল ও চাঁদি কালো। এছাড়া উভয়ের পিঠ ব্রঞ্জ-সবুজাভ, ডানার প্রান্ত পালক কালো-সাদায় ঢেউ খেলানো। লেজের ওপরের দিক হালকা বাদামি ডোরাসহ কালচে। লেজতল সাদাটে এবং কালচে জলপাই রঙের ছিটদাগ। ভ্রু-রেখা সাদা। কান-ঢাকনি মলিন সাদা। দাগহীন গাল ধূসর রঙের। গলা ফিকে জলপাই-বাদামির ওপর সাদা ছিট দাগ। থুঁতনি সাদা। দেহের নিম্নাংশ হলদে-সবুজের সঙ্গে হালকা হলুদ বর্ণের মিশ্রণ এবং পেটে জলপাই রঙের আঁশটে দাগ। কোমর অনুজ্জ্বল হলুদ-সবুজ। ঠোঁটের কোনায় কালো দাগ। ওপরের অংশ ধোঁয়াটে কালো নিচের অংশ হলুদ, অগ্রভাগ কালচে। চোখ কালচে-লাল। পা ও পায়ের পাতা ধূসর-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পালক অনুজ্জ্বল।

প্রধান খাবার: পিঁপড়া, উইপোকা, লার্ভা। এ ছাড়াও ফুলের রসের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। গাছের ঊর্ধ্বমুখী ডালে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।