সাদাভ্রু নীলচটক | Ultramarine Flycatcher | Ficedula superciliaris

420
সাদাভ্রু নীলচটক
সাদাভ্রু নীলচটক | ছবি: ইবার্ড

সাদাভ্রু নীলচটক শীতের পরিযায়ী। চিরহরিৎ বনের বাসিন্দা। অথচ ঘন জঙ্গল কিংবা দীর্ঘ বন এড়িয়ে চলে। তবে সুচালো পত্র-পল্লবের বন কিংবা পাইন বনে বিচরণ রয়েছে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায় খাদ্যের সন্ধানে। চেহারাটা পরিপাটি রাখতে নিয়ম করে গোসল করে। কণ্ঠস্বর সুমধুর। ‘ট্রিলস…ট্রিলস…’ সুরে গান গায়। পুরুষ পাখির রূপ নজরকাড়া। শরীরটাকে ফুলিয়ে বসলে দূর থেকে জাতীয় পাখি দোয়েলের মতো মনে হয়। তবে আকারে অতটা বড় নয়। সে তুলনায় স্ত্রী পাখি অনেকটাই নিষ্প্রভ। আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন প্রজাতির পাখি ভেবে বসাটা বিচিত্র নয়।

এই প্রজাতির পাখির বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত (আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল), নেপাল (হিমালয়ের পাদদেশ), ভুটান, পাকিস্তান, কাশ্মীর, মালদ্বীপ, চীন (ইউনান প্রদেশ), উত্তর-পশ্চিম থাইল্যান্ড ও সুমাত্রা পর্যন্ত। বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশেও বিশ্বে এদের অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক।

প্রজাতির বাংলা নামঃ সাদাভ্রু নীল চটক, ইংরেজি নামঃ আল্ট্রামেরিন ফ্লাইক্যাচার, (Ultramarine Flycatcher), বৈজ্ঞানিক নামঃ Ficedula superciliaris | এরা ‘ঘননীল চুটকি’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•কালাপাশ চুটকি •বাদামি চটক •বাদামিবুক চটক •শিয়ালেবুক নীল চটক
•ধলাভ্রু চুটকি •দুধরাজ •নীলাম্বরি

পাখিটির দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১ থেকে ১২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির রং ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ গাঢ় নীল। চোখের ওপর রয়েছে সাদা টান, যা ঘাড়ের দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে। লেজ নীলাভ হলেও মধ্যপালক কালো। এর ওপর রয়েছে দু-একটি সাদা ছোট পালক। ডানা নীলচে কালো। গলা, বুক, পেট ও লেজতল ধবধবে সাদা। বুকের দুই পাশে রয়েছে চওড়া গাঢ় নীল টান, যা ঘাড়ের পাশ বেয়ে নিচে নেমেছে। ঠোঁট নীলচে কালো। নীচের ঠোঁটের গোড়ায় অল্প ক’গাছি পশম দেখা যায়। অন্যদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ নীলচে ধূসর। ডানার পালক ধূসর কালো। গলা, বুক ও পেট ধূসর সাদা। ঠোঁটের গোড়ায় পশম নেই। উভয়ের চোখের বলয় নীলাভ, মণি কালো। পা ও পায়ের আঙুল নীলাভ কালো।

প্রধান খাবারঃ উড়ন্ত পোকামাকড়। বিশেষ করে মাছি, ছোট ঝিঁঝি পোকা, পঙ্গপাল ইত্যাদির প্রতি আসক্তি বেশি। এদের প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে ভূমি থেকে গাছের সাত মিটার উচ্চতার মধ্যে চিকন ডালে। কাপ আকৃতির বাসা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে গাছের তন্তু, মস, ঘাস, শৈবাল, পশুর চুল ইত্যাদি। ডিম পাড়ে তিন থেকে পাঁচটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।