হলদেপেট ফুলঝুরি | Yellow bellied Flowerpecker | Dicaeum melanoxanthum

335
হলদেপেট ফুলঝুরি
হলদেপেট ফুলঝুরি | ছবি: ইন্টারনেট

হলদেপেট ফুলঝুরি স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুদর্শন চেহারা। পুরুষ পাখির নজরকাড়া রুপ। স্ত্রী পাখি দেখতে কিছুটা নিস্প্রভ। ভিন্ন প্রজাতির মনে হতে পারে। প্রাকৃতিক আবাসস্থল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের বন। এছারাও পাইন বনে দেখা মিলে। নজরে পড়ে গেরস্তেরে সাজনো বাগানেও। অথবা বাড়ির আঙ্গিনার লাউ-কুমরা কিংবা ঝিঙেলতার ঝোপে নাচানাচি করতে দেখা যায়। অর্থাৎ যেখানে ফুল সেখানেই ফুলঝুরি পাখির সমাহার। ফুলের মধু এদের প্রধান খাবার। মধুপানের নেশায় সারাদিন ব্যতিব্যস্ত সময় পার করে। স্বভাবে ভারী চঞ্চল। অস্থরিমতি পাখি কোথাও একদন্ড বসে থাকার যো নেই। ছোট গাছ-গাছালি কিংবা লতাগুল্মের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে সুমধুর কণ্ঠে শিস কাটে। উত্তেজিত হলে কণ্ঠস্বর পাল্টে ‘জিট-জিট-জিট-জিট’ সুরে ডাকতে থাকে। গাছে গাছে ছুটে বেড়ায় ছোট ফল-ফলাদি সন্ধানেও। একাকি কিংবা জোড়ায় বিচরণ করে।

প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় বেশি দেখা যায়; হাক ডাকও বেড়ে যায় তখন। বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভূটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত। ভূমি থেকে এদের বাসা কাছাকাছি বিধায় বিড়াল বা বনবিড়ালের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। তথাপিও সমগ্র বিশ্বে প্রজাতিটি ভালো অবস্থানে রয়েছে।

পাখির বাংলা নামঃ হলদেপেট ফুলঝুরি | ইংরেজি নামঃ ইয়লো-ব্যালিড ফ্লাওয়ারপেকার, (Yellow-bellied Flowerpecker)| বৈজ্ঞানিক নামঃ Dicaeum melanoxanthum |

আরো পড়ুন…
•সিঁদুরে ফুলঝুরি •লালবুক ফুলঝুরি •কমলা নীল ফুলঝুরি
•হলদেতলা ফুলঝুরি •ছোট ফুলঝুরি

দৈর্ঘ্য কমবেশি ১১-১৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৫-৬ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির মাথা, ঘাড়, পিঠ ও লেজ নীলচে কালো। ডানার গোড়ায় সাদাটান। গলার দুপাশ কালো মধ্যখানে সাদা লম্বাটান; বুকের কাছে ঠেকেছে। বুক কালো। পেটে উজ্জল হলুদ। চোখের মনি বাদামি। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথা, ঘাড় ও পিঠ ধূসরাভাকালো। গলার কালো-সাদা তেমন উজ্জল নয় পা নীলচে কালো।

প্রধান খাবারঃ ফুলের মধু, ছোট ফল। মাঝে মধ্যে পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে মৌসুমের হেরফের রয়েছে।ভূমিথেকে দুই-আড়াই মিটার উঁচুতে পাছের ডালে অথবা গুল্মলতা আচ্ছাদিত ঝোপে ঝুলন্ত থলে আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে গাছের নরম তন্তু, তুলা, শ্যাওলা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৩ টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।