পাতারি ফুটকি বিরল দর্শন ভবঘুরে পাখি। দেশে খুব বেশি দেখা যাওয়ার নজির নেই। দুই-তিনবার দেখা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। চেহারা চড়–ই আকৃতির হলেও সামান্য লম্বা ধাঁচের। আকারে সামান্য খাটো। দূর থেকে চড়–ই পাখি মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রজাতি নির্ণয় করা একটু কঠিন বৈকি। শরীরের তুলনায় লেজ খানিকটা বড়। দেখা মেলে হাওর-বাঁওড়, হ্রদ, সংলগ্ন ঘাসবন বা নলখাগড়ার বনে। উপত্যকা, বিক্ষিপ্ত ঝোপ জঙ্গল, তৃণভূমি কিংবা স্যাঁতসেতে এলাকায়ও দেখা মেলে। তবে বেশি দেখা যায় হাওরাঞ্চলে।
প্রজনন মৌসুমেও নিজ বাসভূমিতে চলে যায়। বিচরণ করে ছোট দলে। একাকি বা জোড়ায়ও দেখা যায়। মাটির কাছাকাছি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। বিশেষ করে ঘাসের শিকড়ের নিচের পোকামাকড় শিকারে পারদর্শী এরা। বিচরণকালীন সময় হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে। গানের গলা সমধুর। ‘টিঙ্ক-টিঙ্ক’ সুরে মিহিকণ্ঠে গান গায়। অস্থিরমতি পাখি। স্বভাবে চঞ্চল। ঘাসবনে লুকিয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। তখন চেঁচামেচি শোনা গেলেও ওদের সাক্ষাত মেলে কম। বনতলে দ্রুত দৌড়াতে পারে। সমানতালে পা ফেলে দৌড়ায়। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, জাপান ও উত্তর-পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত।
পাখির বাংলা নামঃ পাতারি ফুটকি, ইংরেজি নামঃ ল্যান্সওলাটেড ওয়ার্বলার (Lanceolated Warbler), বৈজ্ঞানিক নামঃ Locustella lanceolata | ড. রেজা খান ‘বাংলাদেশের পাখি’ নামক গ্রন্থে এদের ‘ডোরাযুক্ত ঘাসবনের টিকরা’ নামে অবিহিত করেছেন।
আরো পড়ুন…
•হলদেপেট ফুটকি
•খয়রাডানা বনফুটকি
•ধলাচোখ ফুটকি
•লালচাঁদি ফুটকি
•লেবুকোমর ফুটকি
•ঘাসবনের বড় ফুটকি
দৈর্ঘ্য ১২ সেন্টিমিটার। ওজন ৯-১৩ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তুলনামূলক পুরুষ সামান্য লম্বা। মাথা খয়েরি জলপাই। পিঠ, ডানা ও লেজ ময়লা বাদামি ডোরাকাটা। লেজ খানিকটা লম্বা। থুঁতনি ও গলা হলদেটে-সাদার সঙ্গে ডোরাকাটা। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত হলদেটে সাদা। চোখ বাদামি। ঠোঁট বাদামি। পা, পায়ের পাতা ও নখ ত্বক বর্ণ। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের রঙ ভিন্ন। ওদের শরীরে হলদেটে আভা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
প্রধান খাবার: মাকড়সা, শুঁয়োপোকা ও অন্যান্য পোকামাকড় এবং ঘাসবীজের প্রতিও আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই। বাসা বাঁধে সাইবেরিয়া অঞ্চলের নির্জন ঘাসবনে। শুকনো ঘাস দিয়ে প্যাঁচিয়ে কাপ আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৫টি।
লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।