ঘাসবনের বড় ফুটকি প্রজাতিটি সুলভ দর্শন, আবাসিক পাখি। চেহারার আদল চড়–ই পাখির মতো মনে হলেও, আকারে একটু বড়। এদের লেজ শরীরের তুলনায় খানিকটা বড়। মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। দেখা মেলে হাওর-বাঁওড়, পার্বত্য চট্টগ্রামের নদ-নদী সংলগ্ন ঘাসবন বা নলখাগড়ার বনে। টেলিফোন বা বৈদ্যুতিক তারের ওপর বসে থাকতে দেখা যায়। তবে বেশি দেখা যায় হাওরাঞ্চলে। প্রজনন মৌসুমেও কাটিয়ে দেয় হাওরাঞ্চলে। ফলে প্রজননে বিঘ্ন ঘটে বেশ খানিকটা। কারণ ওই সময় হাওরের ঘাসবনগুলো জল ছুঁইছুঁই করে। যাতে করে প্রজননের উপযুক্ত গাছ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
তথাপিও ওরা দেশে ভালোই আছে। ওরা বিচরণ করে ছোট দলে। একাকী বা জোড়ায়ও দেখা যায়। মাটির কাছাকাছি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। ঘাসবনের ওপর লাফিয়ে চলে। অর্থাৎ কাছাকাছি এক গাছ থেকে অন্য গাছে গেলে উড়ে না গিয়ে লাফিয়ে যায়। তাতে করে মনে হয় বুঝি ওরা উড়তেই জানে না। বিচরণকালীন হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে ‘টি-উইট’ শব্দে। মাঝে মাঝে গান গায় ‘কুইচি-হুইচির-চিউ-চিউ…’ সুরে। এরা ঘাসবনে লুকিয়ে থাকে বেশির ভাগ। এ সময় এদের চেঁচামেচি শোনা গেলেও ওদের সাক্ষাৎ মেলে কম।
পাখির বাংলা নামঃ ঘাসবনের বড় ফুটকি, ইংরেজি নামঃ স্ট্রিয়েটেড গ্রাসবার্ড, (Striated Grassbird), বৈজ্ঞানিক নামঃ Megalurus Palustris |
আরো পড়ুন…
•হলদেপেট ফুটকি
•খয়রাডানা বনফুটকি
•ধলাচোখ ফুটকি
•লালচাঁদি ফুটকি
•লেবুকোমর ফুটকি
•পাতারি ফুটকি
লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। তুলনামূলক পুরুষ একটু লম্বা। মাথা ও ঘাড় লালচে-বাদামি। শেয়াল রঙের পিঠে কালচে মোটা খাড়া দাগ। লেজের লম্বা পালকের রঙ গাঢ় বাদামি। থুতনি ও গলা সাদাটে। বুক ধূসরাভ-বাদামি। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত বাদামি। চোখ উজ্জ্বল বাদামি। ঠোঁট ধূসর। পা ও পায়ের পাতা বাদামি, নখ কালো।
প্রধান খাবারঃ মাকড়সা, শুঁয়োপোকা ও অন্যান্য পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম বর্ষাকালে। বাসা বাঁধে জলাভূমির কাছাকাছি ঘাসবনে। শুকনো ঘাস দিয়ে পেঁচিয়ে বল আকৃতির বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৪-৫টি।
লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।