ধলামাথা কাঠকুড়ালি | Pale headed Woodpecker | Gecinulus grantia

368
ধলামাথা কাঠকুড়ালি
ধলামাথা কাঠকুড়ালি | ছবি: ইন্টারনেট

ধলামাথা কাঠকুড়ালি স্থানীয় প্রজাতির হলেও বিরল দর্শন ‘ধলামাথা কাঠকুড়ালি’। কালেভদ্রে দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ অরণ্যে। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, হিমালয়ের পূর্বাঞ্চল ও চীনের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত। মূলত এরা বাঁশবন কিংবা আর্দ্র পাতাঝরা বনের বাসিন্দা। বিচরণ করে জোড়ায় কিংবা একাকী। মরা গাছের কাণ্ড ঠুকরিয়ে খাবার খোঁজে। এক গাছ থেকে অন্য গাছে যায় তরঙ্গাকারে ওপর-নিচ হয়ে ওড়ে। মজাদার সেই দৃশ্য উপভোগ করার মতো। কণ্ঠস্বর কর্কশ। ডাকে ‘চেইক-চেইক-চেইক..’ সুরে। বিরক্ত হলে সুর পাল্টে ফেলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করতে মরা গাছের কাণ্ডে ঠোঁট দিয়ে জোরে জোরে ড্রাম বাজানোর মতো শব্দ করে। এ ছাড়াও ডানা ঝাঁপটিয়ে উড়ে ভন ভন আওয়াজ করে স্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে।

প্রজাতিটি বিশ্বে বিপদমুক্ত। বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্যশ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত। শত্রুমুক্ত প্রজাতি। শিকারি (মানুষ) দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার মতো ঘটনা শোনা যায়নি। শোনা যায়নি শিকারি পাখি দ্বারা নির্যাতিত হতেও। তথাপিও প্রজাতি দেশে বিপদমুক্ত নয়। এর প্রধান কারণটি হচ্ছে অবাধে বৃক্ষ নিধন। যার ফলে আজ প্রজাতিটি বিরল দর্শন হয়ে পড়েছে। অথচ এরা স্থানীয় প্রজাতিরই পাখি।

পাখির বাংলা নামঃ ধলামাথা কাঠকুড়ালি, ইংরেজি নামঃ পেল হেডেড উডপেকার, (Pale headed Woodpecker), বৈজ্ঞানিক নামঃ Gecinulus grantia | এরা ‘হালকা রঙের কাঠঠোকরা’ নামেও পরিচিত।

আরও পড়ুন…
•মেটেমাথা কাঠকুড়ালি •কলজেবুটি কাঠকুড়ালি •পাকড়া কাঠঠোকরা
•হলুদগলা কাঠঠোকরা •সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা •তামাটে কাঠকুড়ালি
•ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা •খয়রা কাঠকুড়ালি •হলদেচাঁদি কাঠকুড়ালি
•বড় কাঠঠোকরা

দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৫ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথার তালু গাঢ় পাটকিলে, স্ত্রী পাখির সোনালি জলপাই-হলুদ। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের উভয়ের ঘাড় ও ঘাড়ের পাশ সোনালি জলপাই-হলুদ। পিঠ খয়েরি-লাল। ডানার প্রান্ত পীতাভ-পাটকিলে। লেজ বাদামি। দেহতল খয়েরি-বাদামি। ঠোঁটের অগ্রভাগ পাণ্ডু বর্ণের, গোড়ার দিক ফ্যাকাসে। চোখ লালচে-বাদামি। পা ও পায়ের পাতা জলপাই রঙের।

প্রধান খাবারঃ গাছ পিঁপড়া, পোকামাকড় ও গোবরে পোকা। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে মে। গাছের কাণ্ডে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। একই বাসা কয়েক বছর ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৫-১৭ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।