হলদেপা গাঙচিল | Yellow legged Gull | Larus cachinnans

316
হলদেপা গাঙচিল
হলদেপা গাঙচিল | ছবি: ইন্টারনেট

হলদেপা গাঙচিল সুলভ দর্শন পরিযায়ী পাখি। কেবলমাত্র শীতে প্রজাতির আগমন ঘটে। দেশে দেখা মেলে সুন্দরবন এলাকায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, নিঝুমদ্বীপ ও মনপুরাতে। এছাড়াও খাবারের সন্ধানে উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে বিচরণ করতে দেখা যায় এ সময়। মিঠা জলের চেয়ে লবণ জলে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বেশি দেখা যাওয়ার মূল কারণই এটি। এরা বিচরণ করে ঝাঁক বেঁধে। চলাচলরত নৌযানকে অনুসরণ করতে দেখা যায় প্রায়ই। নৌযানের পেছন পেছন চক্কর মেরে উড়ে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে। এছাড়াও বালুতটে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় এদের। মরা মাছ খাওয়ার লোভে দ্বীপাঞ্চলের জেলে পল্লীতে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। স্বভাবে শান্ত। ঝগড়াঝাটি পছন্দ নয়। নিজেদের মধ্যে খুঁনসুটি বেঁধে গেলে বিরক্ত হয়ে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে ওঠে ‘ক্রাআ-ক্রা-আ’।

প্রজাতির উপস্থিতি দেশে সন্তোষজনক। শিকারি পাখি ব্যতিরেকে এদের পারতপক্ষে কেউ তেমন একটা বিরক্ত করে না। ফলে এরা আমাদের দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, ইসরাইল, সিরিয়া, তুরস্ক, সাইপ্রাস, সেনেগাল, গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও ইংল্যান্ড পর্যন্ত।

পাখির বাংলা নামঃ হলদেপা গাঙচিল, ইংরেজি নামঃ ইয়লো-লেগড গাল, (Yellow-legged Gull), বৈজ্ঞানিক নামঃ Larus cachinnans | এরা ‘জল কবুতর’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•গাঙচিল •খয়রামাথা গাঙচিল •সাদাডানা গাঙচিল •ঝুঁটিওয়ালা ঠোঁটকালো গাঙচিল •কালামাথা গাঙচিল •বড়ঠোঁটি গাঙচিল •কালাপেট গাঙচিল •নদীচিল

লম্বায় ৫২-৬৮ সেন্টিমিটার। ডানা প্রসারিত অবস্থায় ১২০-১৫৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। মাথা, ঘাড় ও গলা ধবধবে সাদা। পিঠ ও ডানা ধূসর। তবে ডানায় সামান্য ফুটকি নজরে পড়ে। লেজে কালোর ওপর দু-একটি সাদা ফুটকি। দেহতল ধবধবে সাদা। ওড়ার পালক সাদা। চোখের বলয় লাল, তারা হলদেটে। ঠোঁট মোটা হলুদ। নিচের ঠোঁটের ডগা উজ্জ্বল লাল। পা ও আঙ্গুল হলুদ।

প্রধান খাবারঃ মাছ। এছাড়াও বালুচরে ঘুরে পোকামাকড় খেতে দেখা যায়। প্রজনন মৌসুম মধ্য মার্চ থেকে মে পর্যন্ত। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে নিজ বাসভূমিতে। জলাশয়ের কাছাকাছি ভূমি অথবা পাথুরে এলাকায় ঘাস, লতাপাতা বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-৩১ দিন। শাবক শাবলম্বী হতে সময় লাগে ৩৫-৪০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।