পাকড়া ধনেশ | Oriental Pied Hornbill | Anthracoceros albirostris

297
পাকড়া ধনেশ
পাকড়া ধনেশ | ছবিঃ ইবার্ড

পাকড়া ধনেশ দুর্লভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও দেখা যায় ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশস্ত পাতাওয়ালা চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। দেখা যায় পাতাঝরা বনেও। জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। গড়ন অদ্ভুদ। স্বভাবেও তদ্রুপ।

প্রজনন মৌসুমে অদ্ভুদকান্ড ঘটায়। স্ত্রী পাখি স্বেচ্ছায় গাছের কোটরে  ঢুকে পড়ে। তখন পুরুষ পাখি নিজেই কাদামাটি বহন করে বা নিজের বিষ্ঠা ঠোঁট দিয়ে লেপে গাছের কোটরের মুখ বন্ধ করে দেয়। শুধু ছোট্ট একটি ছিদ্র রাখে বায়ু চলাচল এবং খাবারের জোগানের জন্য। খাবার জোগান দেয় পুরুষ পাখি। ডিম-বাচ্চা ফোটলেও খাদ্যের চাহিদা মেটায় পুরুষ পাখিই। বাচ্চা স্বাবলম্বী হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরুষ পাখিকেই খাবার জোগান দিতে হয়। বাচ্চারা ফুরফুরে হলে ভিতর থেকে মা পাখি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁকরিয়ে মাটির আস্তর ফুটো করে বেরিয়ে আসে। বড় ধরনের সমস্যা না হলে এ পাখিরা আজীবন জঙ্গলের একই স্থানে বাস করে। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। ডাকে, ‘কেক-কেক-কক-কক-কুয়ি-কুয়ি’- সুরে। বিশ্বে এরা বিপদমুক্ত হলেও বাংলদেশে বিপন্ন। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নামঃ পাকড়া ধনেশ, ইংরেজি নামঃ অরিয়েন্টাল পায়েড হর্নবিল, (Oriental Pied Hornbillবৈজ্ঞানিক নামঃ Anthracoceros albirostris | এরা ‘উদয়ী পাকড়া ধনেশ’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•দেশি মেটেধনেশ
•রাজ ধনেশ

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ৯০ সেন্টিমিটার (ঠোঁটের ডগা থেকে লেজ আগা পর্যন্ত)। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির গলায় ফ্যাকাসে নীল পট্টি। পিঠ উজ্জ্বল নীলাভ-কালো। ডানার প্রান্ত ও লেজের ডগা সাদা। লেজের উপরাংশ কালো। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত সাদা। চোখের গোলকের চামড়া নীলচে সাদা। ঠোঁট ও ঠোঁটের ওপরের বর্ম হলুদ। চোখ লাল। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ শ্লেট বর্ণের। স্ত্রী পাখি আকারে ছোট। চোখ বাদামি। ঠোঁট এবং বর্মের অধিকাংশ স্থান কালো। অপ্রাপ্তবয়স্কদের গায়ের রঙ নিষপ্রভ। লেজ সরু এবং ঠোঁট তুলনামূলক খাটো।

প্রধান খাবারঃ ফল। এ ছাড়াও পাখির ছানা, ইঁদুর, ছোট সাপ, গিরগিটি এবং ব্যাঙ শিকার করে। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। ভূমি থেকে ৮-১০ মিটার উঁচু গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩ টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৭-৩০দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog