কেয়ারি সিন্দাবাদের সওয়ার হয়ে নাফ নদী পার হচ্ছি। গন্তব্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ। কনকনে শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছি জাহাজে। মাঝে-মধ্যে জানালার কাচ সরিয়ে নাফের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। ওপারে মিয়ানমারের ভূখণ্ড নজরে পড়তে অভিভূত হয়ে পড়ি। আরও অভিভূত হয়ে পড়েছি এক দঙ্গল জলচর পাখির কলকাকলিতে। ওরা ভেসে বেড়াচ্ছে নাফ নদীর জলে, আবার কিছু পাখি ডানা মেলে হাওয়ায় ভেসে ভেসে ডাকছে ‘কি-ই-য়া’ সুরে। বেশ পরিচিত সুশ্রী গড়নের পাখি এরা। নজর পড়লে প্রকৃতির এ বর্ণাঢ্য অলঙ্কার থেকে কেউ চোখ ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
শীত মৌসুমে ডাকাতিয়া, পদ্মা, মেঘনা, রজতরেখা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার জলে ওদের ভেসে বেড়াতে দেখেছি অসংখ্যবার। বছরখানেক আগে দেখেছি ধলেশ্বরীর বুকে জেলেদের ভাসমান ডিঙ্গিতে বেড়ানোর সময়। আজ ওই প্রজাতির পাখিগুলোকে দেখে সে কথা মনে পড়েছে। এরা পরিযায়ী হলেও সুলভ দর্শন। শীতের শুরুতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার নদ-নদী কিংবা সমুদ্র উপকূলে আশ্রয় নেয়। ছোট-বড় দলে ভেসে বেড়ায় জলাশয়ে। দিনের বেশির ভাগ সময় উড়ে উড়ে ব্যস্ত সময় পার করে।
এ পাখির বাংলা নামঃ খয়রামাথা গাঙচিল, ইংরেজি নামঃ ব্রাউনহেডেড গাল, (Brown-headed gull), বৈজ্ঞানিক নামঃ Larus brunnicephalus | গোত্রের নামঃ লারিদি । অঞ্চলভেদে গঙ্গা কৈতর নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•গাঙচিল
•সাদাডানা গাঙচিল
•ঝুঁটিওয়ালা ঠোঁটকালো গাঙচিল
•কালামাথা গাঙচিল
•বড়ঠোঁটি গাঙচিল
•হলদে পা গাঙচিল
•কালাপেট গাঙচিল
•নদীচিল
এরা লম্বায় ৩৮-৪৫ সেন্টিমিটার। প্রজনন সময়ে টুপি আকৃতির মাথাটা গাঢ় বাদামি রং ধারণ করে। শীতে রং বদলিয়ে হয় ধূসর-সাদা-কালো। পিঠ ধূসর। লেজ কালো। শরীরের বাকি অংশ ধবধবে সাদা। ঠোঁটের গোড়া রক্তিম, ডগা কালো। পা উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
প্রধান খাবারঃ মাছ। মরা মাছের প্রতি আসক্তি বেশি। প্রজনন সময় মধ্য জুন থেকে জুলাই। তখন নিজ বাসভূমিতে ফিরে যায়। বাসা বাঁধে লাডাখ, তুর্কিস্তান ও দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ার দ্বীপাঞ্চলে। এরা সরাসরি মাটিতে ঘাস, লতা-পাতা বিছিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২-৩টি।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।