
ছোট পানকৌড়ি পাখিটার বর্ণ কাক কালো। দূর থেকে দেখতে কাকই মনে হয়। আসলে কিন্তু তা নয়। এমনকি কাক গোত্রীয়ও কেউ নয়। তারপরও নামের শেষে অনেকে যোগ করে দেয় ‘কাউয়া’। এটি দেশীয় পাখি। একযুগ আগেও আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের পুকুর কিংবা জলাশয়ে এদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। বর্তমানে যত্রতত্র দেখা না গেলেও বর্ষাকালে হাওর-বাঁওড়, নদীতে সন্তোষজনকহারে বিচরণ করতে দেখা যায়। শীতকালে নদী বা জলাশয়ের তীরে কঞ্চি অথবা লাঠিসোঁটায় বসে পাখা মেলে রোদ পোহাতে দেখা যায়। কিছু সময় গায়ে রোদ লাগিয়ে ঝপাত করে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে।
তারপর ডুব সাঁতার দিয়ে পিছু নেয় মাছের। শিকার ধরতে পারলে ভুস করে ভেসে ওঠে জলের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরা মাছটাকে গলাটানা দিয়ে গলাধঃকরণ করে। এরা একটানা দীর্ঘক্ষণ ডুবাতে পারে বলে অনেকেই এদের ডুবুরি পাখি নামে ডাকে। এ পাখিদের সঙ্গে আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের একটা ব্যাপার-স্যাপারও জড়িয়ে আছে। আছে অনেক কবিতায়, উপন্যাসেও এদের চরিত্র। আমার নিজের লেখা একাধিক (বারোটি গল্প-উপন্যাসে) গ্রন্থেও এদের চরিত্র বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
এতই প্রিয় এ পাখি আমার কাছে। অথচ পাখিটির বর্ণ কুচকুচে কালো। চেহারাটা মায়াবী না হলেও দেখতে বিরক্ত লাগে না। কেন জানি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে পাখিটাকে। শিকারিরা এদের বাগাড়ে পেলে সহজে পিছু ছাড়ে না। কারণ এ পাখির মাংস বেশ মজাদার। অনেকটা হাঁসের মাংসের মতো। মাংসের লোভে নির্দয়ভাবে একবার একটি পাখিকে গুলি করে মেরেছি প্রায় দুই যুগ আগে। ক্ষমাপ্রার্থী প্রকৃতির কাছে তাই আমি।
পাখিটার বাংলা নামঃ ছোট পানকৌড়ি, ইংরেজি নাম: লিটল করমোর্যান্ট, (Little Cormorant), বৈজ্ঞানিক নাম: ফালাক্রোকোরাক্স নিগার, (Phalacrocorax niger), গোত্রের নাম: ফালাক্রোকোরাসিদি । অঞ্চলভেদে এ পাখিদের ডাকা হয়, পানিকাবাডি, পানিকাউর, পানিকাউয়া, পানিকুক্কুট ইত্যাদি। আমাদের দেশে তিন ধরনের পানকৌড়ির সাক্ষাৎ মেলে। যথাক্রমে : বড় পানকৌড়ি, মাঝারি পানকৌড়ি ও ছোট পানকৌড়ি।
আরও পড়ুন…
•দেশি পানকৌড়ি
•বড় পানকৌড়ি
এ পাখি লম্বায় ৪৮-৫০ সেন্টিমিটার। এদের শরীরটাই কালো পালকে আবৃত। সূর্যালোকে পিঠ থেকে নীলাভ-সবুজের আভা বের হয়। অন্য সময় ধূসর কালো দেখায়। গলা মলিন সাদা। ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো, বর্ণ কমলা হলদে তবে ডগা কালো। পা হাঁসের পায়ের পাতার মতো জোড়া লাগানো। চোখ লাল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ মাছ। ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকামাকড়ও খায়। প্রজনন সময় জুন থেকে জুলাই। বাসা বাঁধে শুকনো ডালপালা দিয়ে। পানকৌড়িরা দলবদ্ধভাবে বাসা বাঁধে। দেখা গেছে একই গাছে অসংখ্য দম্পতি বাসা তৈরি করছে। বাসার শ্রীছাদ নেই। ডিমের সংখ্যা ৪-৫টি। ডিম ফোটে ১৭-১৯ দিনে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।