ক্ষুদে ঘুঘু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দেখা যাওয়ার নজির নেই। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মাত্র দুই-তিনবার দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। ফলে এরা স্থানীয় নাকি পরিযায়ী প্রজাতির তা নিশ্চিতভাবে নিরূপণ করা যায়নি। বলা যায় অতি বিরল দর্শন ‘ক্ষুদে ঘুঘু’। দেখতে অনেকটাই তিলা ঘুঘুর মতো। কণ্ঠস্বরও সেরকম। সুরে মাদকতা রয়েছে। বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। চেহারা কবুতর আদলের। দেখতে মায়াবী। স্বভাবে শান্ত। পারতপক্ষে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয় না। বিচরণ করে মাঠে-ঘাটে। তবে সেটি অবশ্য শুষ্ক শস্যভূমি হতে হবে। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে এলাকা এদের একদম অপছন্দ।
জলপান ব্যতিরেকে জলাশয়ের কাছে ঘেঁষে না। গোসল করে নিয়মিত। তবে গায়ে জলের পরিবর্তে ধূলি ছিটিয়ে গোসল করে। খাদ্যের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির হাঁকডাক বেড়ে যায়। তখন ‘কুকু..ক্রো..ক্রো..’ সুরে ডেকে স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ছাড়া এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি পূর্ব ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইসরাইল, লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব অমিরাত, সৌদি আরব, ইরান পর্যন্ত। আফ্রিকা অঞ্চলেও দেখা যায়। তুলনামূলক এদের আবাসস্থল কিছুটা মরুময় এলাকায়।
পাখির বাংলা নামঃ ক্ষুদে ঘুঘু, ইংরেজি নামঃ লিটল ব্রাউন ডাভ, (Little brown dove), বৈজ্ঞানিক নামঃ Streptopelia senegalensis |
আরো পড়ুন…
•রাজঘুঘু
•লাল ঘুঘু
•তিলা ঘুঘু
•সবুজ ঘুঘু
দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৬-২৭ সেন্টিমিটার। মাথা ও ঘাড় গোলাপি-বাদামি। পিঠ বালু মিশ্রিত বাদামি বর্ণ। লেজের বাইরের পালক সাদা। লেজের গোড়া ও কাঁধের পালক ধূসর। ডানার প্রান্ত পালক কালো। ওড়ার পালক কালো। বুক গোলাপি-বাদামি। পেট বালু মিশ্রিত বাদামি। চোখ বাদামি কালো। ঠোঁট শিং কালো। পা গোলাপি লাল। নখর কালো।
প্রধান খাবারঃ শস্যবীজ, ঘাসের কচি ডগা ও মাটি। মাঝেমধ্যে উইপোকা খেতে যায়। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। গাছের তেডালে অথবা দালানের ফাঁকে খড়কুটা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩-১৫ দিন। শাবক সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে উড়তে শেখে।
লেখকঃ আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।