খুব বেশি সময়ের কথা নয়, তখন লাল ঘুঘু এর বিচরণ ছিল দেশের যত্রতত্র। হালে এদের নজরে পড়ছে না সেরকমটি। অনেকটাই কমে গেছে প্রজাতিটি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বন-বনানী, ঝোপ-জঙ্গল উজাড় হওয়া এবং শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে আইইউসিএন লাল ঘুঘুকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এদের স্থায়ী নিবাস বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, জাপান, তাইওয়ান ও চীন।
এতদঞ্চল থেকে এরা পরিযায়ী হয়ে পৌঁছে আফগানিস্তান, ওমান, ইরান, রাশিয়া ও কোরিয়ায়। দেখা যায় সিঙ্গাপুরেও (অবমুক্ত করার ফলে যৎসামান্য নজরে পড়ে)। আবার কিছু নজরে পড়ে সংযুক্ত আরব-আমিরাতে। সেখানে ওরা পরিযায়ী নাকি স্থায়ী বাসিন্দা তা শনাক্ত করা যায়নি এ পর্যন্ত। এরা নিরীহ এবং শান্ত প্রকৃতির পাখি। বিচরণ করে ঝোপ-জঙ্গল, খোলা মাঠ প্রান্তর কিংবা কৃষিজমিতে। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে এটা-সেটা কুড়িয়ে খায়। ভোর ও গোধূলিতে খাদ্য সংগ্রহে তৎপর থাকে। পুরুষ পাখি প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী পাখিকে আকৃষ্ট করে, ‘ক্রুরু- ক্রুরু-ক্রুরু’ সুরে ডেকে।
পাখির বাংলা নামঃ লাল ঘুঘু, ইংরেজি নামঃ রেড টার্টল ডাব, (Red Turtle Dove) বৈজ্ঞানিক নামঃ Streptopelia tranquebarica | এরা লাল রাজঘুঘু এবং ‘জঙ্গলা ঘুঘু’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•রাজঘুঘু
•ক্ষুদে ঘুঘু
•তিলা ঘুঘু
•সবুজ ঘুঘু
প্রজাতিটি লম্বায় ২৩ সেন্টিমিটার। মাথা নীলাভ-ধূসর। ঘাড়ে মোটা কালো বন্ধনী। বন্ধনীর উপরে-নিচে থাকে সরু সাদা বন্ধনী। পিঠ ও ডানার পালক ইট রঙের লালচে। ডানার প্রান্ত পালক কালচে। নিতম্ব নীলাভ-ধূসর। বুক ও পেট হালকা গোলাপী। লেজ ধূসর। লেজের নিচের দিকটা সাদা। স্ত্রী পাখির রঙ ভিন্ন। দেহের উপরের দিকে গাঢ় হলদে-বাদামি। নিচের দিকে হলদে-ধূসর। উভয়ের ঠোঁট কালো, পা বেগুনি-কালো। ওড়ার পালক কালো।
প্রধান খাবারঃ শস্যবীজ, ঘাসের কচি ডগা। এ ছাড়াও মাটির ক্ষুদ্রকণা কুড়িয়ে খায়। প্রজনন সময় নির্দিষ্ট নয়। বছরের যে কোনো সময়ে এরা প্রজননে সক্ষম। বাসা বাঁধে গাছের ডালে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে লতা ও সরু কাঠি। ডিম পাড়ে দুটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।