সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা | Greater Flameback | Chrysocolaptes lucidus

264
সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা
সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা | ছবি: ইন্টারনেট

সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা দেশের সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেহটা বাহারি রঙের পালকে আবৃত হলেও চোখের দিকে তাকালে ভয়ঙ্কর দর্শন মনে হয়। অনেকটা চোর বদমায়েশের মতো। প্রজাতিটির দেখা মেলে সর্বত্রই। এর মধ্যে চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, প্যারাবন এবং লোকালয়ের আশপাশের বনবাদাড়ে বেশি দেখা মেলে। বিচরণ করে একা কিংবা জোড়ায় জোড়ায়। কখনো কখনো পারিবারিক দলেও দেখা যায়। মাটিতে নামে না খুব একটা। গাছের কাণ্ড বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে ওঠে। পোকা আক্রান্ত অথবা মরা গাছের কাণ্ডে শক্ত ঠোঁটের দ্বারা আঘাত করে শিকার খোঁজে। এরা কষ্টসহিষ্ণু পাখি। রুক্ষ পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে।

প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে আর ধাতব কণ্ঠে ডেকে ওঠে, ‘কি-কি-কি-কি-কি…’ সুরে। হঠাৎ আওয়াজটা কানে গেলে পিলে চমকে ওঠে যে কারোই। গভীর বনাঞ্চলে এদের আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ভৌতিক সুরে রূপ নেয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এদের দেখা মেলে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রজাতিটি বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত। দেশে এদের শত্রুর সংখ্যা নগণ্য।

পাখির বাংলা নামঃ সোনালি পিঠ কাঠঠোকরা, ইংরেজি নামঃ গ্রেটার ফ্লেমব্যাক, (Greater Flameback), বৈজ্ঞানিক নামঃ Chrysocolaptes lucidus | বাংলাদেশে মোট ২০ প্রজাতির কাঠঠোকরার সাক্ষাৎ মেলে।

আরো পড়ুন…
•পাকড়া কাঠঠোকরা •সাদা ভ্রু কাঠঠোকরা •হলুদগলা কাঠঠোকরা
•সবুজ ডোরা কাঠঠোকরা •ধূসরমাথা বামন কাঠঠোকরা •হিমালয়ী কাঠঠোকরা
•ক্ষুদে কাঠঠোকরা •বড় কাঠঠোকরা •মেঠো কাঠঠোকরা

লম্বায় ৩৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথায় লাল পালকের খাড়া ঝুঁটি। যা দূর থেকে লাল রুমি টুপির মতো দেখায়। সাদা গালে সরু কালোরেখা। চওড়া কালোটান ঠোঁটের গোড়া থেকে শুরু করে ঘাড় অবধি ঠেকেছে। পিঠ ও ডানার রং সোনালি-জলপাই হলুদ। লেজ কালো, লেজের নিন্মাংশ লাল। দেহতল নিষ্প্রভ সাদার ওপর সরু কালো টান। অপরদিকে স্ত্রী পাখির মাথার ঝুঁটি কালো-সাদা বুটিদার। উভয়ের চোখের বলয় হলুদ, ঠোঁট নীলচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটাই স্ত্রী পাখিদের মতো।

প্রধান খাবারঃ গাছের বাকলের নিচের অথবা মরা কাণ্ডের ভেতরের পোকামাকড় এবং গাছ পিঁপড়া। ফুলের মধুর প্রতি আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুলাই। গাছের মরা কাণ্ডে নিজেরা গর্ত খুঁড়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৪-৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। শাবক সাবলম্বী হতে সময় লাগে দিন পঁচিশেকের মতো।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।