মরাল | Bar headed goose| Anser indicus

144
Bar-headed-goose
মরাল | ছবি: উইকিপিডিয়া

মরাল দুর্লভ পরিযায়ী পাখি হলেও একটা সময়ে সুলভ দর্শন ছিল আমাদের দেশে। হালে দেশে খুব একটা দেখা যায় না। কালেভদ্রে দেখা মেলে শীতে। তখন পরিযায়ী হয়ে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এরা আমাদের দেশে আসে। ওই সময় চলার পথে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট পাড়ি দিতে হয় ওদেরকে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশে এসে উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় নেয়। তবে ওদের বিচরণক্ষেত্র অবশ্যই নির্জন এলাকা হওয়া চাই। যার ফলে খুব কমই পাখি দেখিয়েদের নজরে পড়ে। এরা ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে।

সাধারণত বড় দলেই বিচরণ করে। ওড়ার সময় ‘ঠ’ আকৃতির সারি দিয়ে ওড়ে। উড়তে উড়তে ‘আঙ..আঙ..আঙ’ সুরে ডাকে। আওয়াজ অনেক দূর থেকে শোনা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, চীন, মঙ্গোলিয়া ও সাইবেরিয়া পর্যন্ত বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। বিশ্বে এরা বিপন্মুক্ত হলেও বাংলাদেশে দুর্লভ দর্শন। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত। আমাদের দেশে এরা মোটেও নিরাপদ নয়। উপকূলীয় এলাকার শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এদেরকে পাকড়িয়ে হাটে-বাজারে নিয়ে দেশি রাজহাঁস বলে চালিয়ে দেয়।

পাখির বাংলা নামঃ মরাল, ইংরেজি নামঃ বারহেডেড গুজ, (Bar-headed goose), বৈজ্ঞানিক নামঃ আন্সার ইন্ডিকাস, Anser indicus | পরিযায়ী, গোত্রের নামঃ আনাটিদি । এরা ‘দাগি রাজহাঁস’ নামেও পরিচিত।

প্রজাতিটি লম্বায় ৭৩-৭৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১.৬ কেজি। মাথায় দুটি কালো ডোরা দাগ। গলা ও চিবুক ধূসর পাটকিলে, যা গলার নিচে গিয়ে ঠেকেছে। গলার দু’পাশে সাদা টান। পিঠ ও পেট ধূসর। ডানার নিচে দু’পাশ কালো। ঠোঁটের অগ্রভাগ কালো। বাদ বাকি হলুদ। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাথায় কালো ডোরা থাকে না।

প্রধান খাবারঃ ধান ও জলজ উদ্ভিদের কচিডগা। প্রজনন মৌসুম মে থেকে জুন। বাসা বাঁধে তিব্বতের হিমালয় অংশের জলাভূমির কাছাকাছি। সমতল ভূমি থেকে যার উচ্চতা প্রায় চার হাজার তিনশ’ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। মরাল নরম মাটিতে পা দিয়ে চেপে চেপে খোদল বানিয়ে তাতে পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-৩০ দিন।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog