পাখি | Pakhi | ePakhi

295
পাখি
পাখি | ইন্টারনেট

পাখি পালক ও পাখা বিশিষ্ট দ্বিপদী মেরুদন্ডী প্রাণী। কিছু পতঙ্গ এবং বাদুড়ের পাখা থাকলেও কেবল পাখিদেরই পালক আছে। এদের মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত বড়, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও শ্রবণশক্তি প্রখর, কিন্তু ঘ্রাণশক্তি অপেক্ষাকৃত কম। ভারী চোয়াল ও দাঁতের পরিবর্তে শক্ত চঞ্চু এবং ফাঁপা হাড় ও অন্যান্য অংশে বায়ুথলী থাকায় পাখির দেহের ওজন কম। পৃথিবীতে পাখির প্রজাতি রয়েছে প্রায় ১০০০০ টি। এমনিতে সব জীবিত পাখিই নিঅর্নিথিসউপশ্রেণীর অন্তর্গত। পাখির শ্রেণীকে (Aves) মোট ২৩টি বর্গ, ১৪২টি গোত্র, ২০৫৭টি গণ এবং ৯৭০২টি প্রজাতিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং পুরোনো কিছু প্রজাতিকে বিভাজন করে নতুন প্রজাতি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত জীবাশ্ম নির্দেশ করে যে পাখিদের আবির্ভাব হয়েছিল জুরাসিক যুগে, প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে। জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের মতে, সাড়ে ৬ কোটি বছর আগের ক্রিটেশাস-প্যালিওজিন বিলুপ্তির পর পাখিরাই চার উপাঙ্গবিশিষ্ট ডাইনোসরের একমাত্র বংশধর। জীবিত পাখিদের মধ্যে মৌ হামিংবার্ড সবচেয়ে ছোট (মাত্র ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি) আর উটপাখি সবচেয়ে বড় (২.৭৫ মিটার বা ৯ ফুট)।

আধুনিক যুগের পাখিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- পালক, দন্তবিহীন চঞ্চু, শক্ত খোলকবিশিষ্ট ডিম যার সাহায্যে এরা এদের বংশধর রেখে যায়, চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হৃৎপিণ্ড, উচ্চ কোষীয় জৈব-রাসায়নিক হার, হালকা কিন্তু মজবুত হাড় ইত্যাদি। সব পাখিরই ডানা আছে, একমাত্র ব্যতিক্রম অধুনালুপ্ত নিউজিল্যান্ডের মোয়া।

সামনের উপাঙ্গ বিবর্তিত হয়ে আসলে ডানার রূপ লাভ করেছে। প্রায় সব পাখি উড়তে পারে এবং উড্ডয়নে অক্ষম পাখিগুলিও (যেমন: উটপাখি, পেঙ্গুইন) উড়তে সক্ষম পূর্বপুরুষের বিবর্তনের ফসল। উড়তে অক্ষম পাখিদের বেশিরভাগই কতিপয় দ্বীপের স্থানিক বাসিন্দা। পাখিদের পরিপাক ও রেচন প্রক্রিয়া তাদের সহজভাবে ওড়ার জন্য অনুকূল এবং অন্য সব প্রাণীদের থেকে একেবারেই আলাদা। পাখিদের মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি, বিশেষত কাক ও টিয়ার কয়েকটি প্রজাতি, প্রাণিজগতে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। কয়েক প্রজাতির পাখি ছোটখাটো হাতিয়ার বানানো ও তা ব্যবহারের কৌশল রপ্ত করেছে। কিছু কিছু সামাজিক পাখির মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সঞ্চালন করে যেতে দেখা যায়।

পাখিদের মধ্যে অনেকেই পরিযায়ী। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে এরা বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। এ ধরনের স্থানান্তর থেকে বেশি দেখা যায় স্বল্পদৈর্ঘ্যের অনিয়মিত গতিবিধি। বেশিরভাগ পাখিই সামাজিক জীব। এরা দৃষ্টিগ্রাহ্য সংকেত এবং ডাক বা শিষের মাধ্যমে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করে। বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপেও এরা অংশ নেয়, যেমন- একই ঋতুতে প্রজননে অংশ নেয়া, একসাথে কলোনি করে বাসা করা, ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো, দলবদ্ধ ভাবে খাবার খোঁজা এমনকি দল বেঁধে শত্রুকে তাড়িয়ে দেয়া। অধিকাংশ পাখিই কেবলমাত্র একটি প্রজনন ঋতুর বা সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য একগামী, সারা জীবনের জন্য জুটি বাঁধার ব্যাপারটি কমই দেখা যায়। বহুপতি বা বহুপত্নী প্রথাও পাখিদের মধ্যে দেখা যায়। পাখিরা সাধারণত তাদের প্রস্তুতকৃত বাসাতেই ডিম পাড়ে এবং বাবা-মা তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বেশিরভাগ পাখি বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পরও বেশ কিছুদিন সময় পর্যন্ত বাচ্চার প্রতিপালন করে।

পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পাখিরা বিস্তৃত, অর্থাৎ সাতটি মহাদেশের সবখানেই পাখি দেখা যায়। বেশিরভাগ পাখির বায়বীয় অভিযোজন ঘটেছে বলে এদের অবাধ গমন সম্ভব হয়েছে। উড়বার জন্য দেহ হালকা হয়েছে এবং দেহের আকৃতি মাকুর মত হয়েছে। বায়ু অভিযোজন হলেও খাদ্য গ্রহণ, আত্মরক্ষা, প্রজনন ইত্যাদি কারণে অরণ্য সমভূমি, পর্বত-গাত্র, লোকালয়, নদ-নদী, খালবিল, সাগর সর্বত্রই পাখিদের বিস্তৃতি ঘটেছে। এমন কয়েক গোত্রের পাখি রয়েছে যাদের পানিতে বিশেষভাবে অভিযোজন ঘটেছে। কিছু সামুদ্রিক পাখি তাদের জীবনের সিংহভাগ কাটায় সমুদ্রে, কেবল ডিম পাড়ারজন্য ডাঙায় আসে। কয়েক প্রজাতির পেঙ্গুইন সমুদ্রের ৩০০ মিটার (প্রায় ৯৮০ ফুট) গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে পারে। পৃথিবীর সর্বদক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ৪৪০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে তুষার পেট্রেলের প্রজনন কলোনির সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে পাখিদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। পূর্বে ধারণা ছিল যে এসব অঞ্চলে পাখিদের প্রজাত্যায়নের হার বেশি বলে প্রজাতির সংখ্যাও বেশি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীষ্মকালীন অঞ্চলের তুলনায় অন্যসব অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে পাখিদের বিলুপ্তির হার ছিল বেশি। সে কারণে সেসব অঞ্চলে তাদের বৈচিত্র্য কম।

বেশ কিছু প্রজাতির পাখি মানুষের মাধ্যমে তাদের আদি আবাস থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেখানে সফলভাবে বংশবৃদ্ধি চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অবমুক্তকরণের ফলে বেশ কিছু পাখি প্রায় সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে; যেমন: পাতি মথুরা (Phasianus colchicus) শিকারযোগ্য পাখি হিসেবে সারা বিশ্বে বিস্তৃত। আবার মানুষের অনিচ্ছায় কিছু প্রজাতি অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন: উত্তর আমেরিকার বহু শহরে খাঁচা থেকে পালিয়ে যাওয়া মুনি টিয়ারা তাদের নতুন ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। আবার কৃষিকাজে উন্নয়নের ফলে গো বগা, হলদেমাথা কারাকারা ও গালাহ্ তাদের আদি আবাস থেকে বহু দূরে স্বাভাবিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। [উইকিপিডিয়া]

Worlds Largest Bangla Birds Blog