সবুজ বাঁশপাতি । Green Bee eater । Merops Orientalis

180
সবুজ বাঁশপাতি
সবুজ বাঁশপাতি | ছবি: ইন্টারনেট

সবুজ বাঁশপাতি পাখিটা খুব ভালো করেই চিনি। এ প্রজাতির পাখি লোকালয়ের এত কাছাকাছি আসার কথা নয়! কেন এসেছে, তা বোধগম্যও নয়। হয়তো দলছুটও হতে পারে। দেশের খ্যাতিমান পাখি গবেষকদের সঙ্গে অনেকবার পাখি পর্যবেক্ষণে গিয়ে এ প্রজাতির প্রথম সাক্ষাৎ পাই পদ্মার চরে। ঘরের পাশে দেখে তাই তাজ্জব হয়েছি বৈকি।

শীতের দুপুর। সবে খাবারের পর্ব শেষ হয়েছে, ঠিক তখনই ‘ট্রিউ ট্রিউ’ শব্দ কানে এল। শব্দগুলো কানে পৌঁছাতেই খানিকটা হকচকিত হলাম। ডাকটা আমার পরিচিত। এই ডাকের মধ্যে একধরনের মাদকতা আছে, তীক্ষ হলেও শুনতে খারাপ লাগছে না। পাখির কূজন বলে কথা। পাখি পর্যবেক্ষণ করছি বেশ অনেক দিন ধরে, তবে এর আগে এত কাছে এই পাখি দেখার সুযোগ হয়নি। বড়জোর পাঁচ গজ দূরে পাখিটা বসেছে নিমের আধা শুকনা ডালে। ভাগ্যটা ভালো বলতে হয়, না হলে একেবারে দোতলার বারান্দার পাশেই পাখিটা এসে বসবে কোন দুঃখে!

পাখিটার বাংলা নামঃ সবুজ বাঁশপাতি, ইংরেজি নামঃ Asian green bee-eater,  বৈজ্ঞানিক নামঃ Merops Orientalis | অঞ্চলভেদে লোকে সুইচোরা, নরুন চেরা এসব নামেও ডাকে। পাখি গবেষকদের মতে, এরা মেরোপিদি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

আরো পড়ুন…
•বড় সুইচোরা
•খয়রামাথা সুইচোরা

এরা লম্বায় ২০ সেন্টিমিটার। ছিপছিপে গড়ন। গায়ের বর্ণ উজ্জ্বল সবুজ। চঞ্চু কালো, একটু বাঁকানো। চোখের দুই পাশে কাজলরেখা ঘাড়ের সঙ্গে মিশেছে। চিবুক ও গলায় নীলের ছটা। গলার নিচে আছে নেকলেসের মতো একটা কালো টান। মাথা ও পিঠের ওপর অংশের পালক সোনালি। ডানার নিচে উজ্জ্বল তামাটে, যা শুধু ওড়াউড়ির সময়ে নজরে পড়ে। পায়ের রং কালচে। লেজের মাঝবরাবর দুটি পালক দুই ইঞ্চি পরিমাণ বর্ধিত থাকে। পাখিটার মূল আকর্ষণ সেটাই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পাখির লেজের অংশটুকু ডালের নিচ দিয়ে নেমে থাকায় তা ক্যামেরায় বন্দী করতে পারিনি। আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের বাঁশপাতি দেখা যায়—সবুজ বাঁশপাতি, পিঙ্গল মাথা বাঁশপাতি, নীললেজা বাঁশপাতি ও পাহাড়ি বড় বাঁশপাতি।

প্রধান খাবারঃ মাছিভুক পাখি (অন্য পতঙ্গও খায়)। পতঙ্গ পাকড়ানোর কৌশল বেশ চমকপ্রদ। উড়ে গিয়ে খপ করে ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে গিলে ফেলে। বাঁশপাতি শীতকালে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে। বিদ্যুতের তারে অথবা শুকনো কঞ্চিতে ঘুরপাক খেতে খেতে এসে বসেই আবার উড়তে থাকে। বড় চঞ্চল। দলবদ্ধভাবে বাস করে। এদের প্রজনন সময় শীতের শেষে। বাঁশপাতি গাছে বাসা বানাতে পারে না। সাধারণত নদীর পাড়ে খাড়া জায়গায় সুড়ঙ্গের মতো গর্ত করে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৫-৭টি। রং ধবধবে সাদা। স্ত্রী-পুরুষ দুয়ে মিলে ২১-২৭ দিন ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog