ছোট সাহেলি সামাজিক পাখি, দলের সবাই মিলে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। সংখ্যায় প্রচুর এবং গা ঘেঁষে উড়ে বেড়ানোর কারণে দূর থেকে মশার ঝাঁকের মতো মনে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে গা ঘেঁষে উড়লেও এদের একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে না। এ প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য, ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ৮ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে ভিন্ন রকম। পুরুষ পাখির মাথা, চিবুক ও গলা কালচে-ধূসর। ওপরের দিকটাও ধূসর। ডানা কালচে-পাটকিলে। ডানার মাঝ বরাবর সিঁদুর লাল। লম্বা লেজ কালচে-পাটকিলে, মধ্যখানে একজোড়া পালক আগুনরঙা। কটি সিঁদুরে বর্ণ ও বুক সিঁদুরে লাল। নিচের দিকটা হলদেটে সাদা। লেজের তলা হালকা লাল। অপরদিকে স্ত্রী পাখির রঙ পুরুষের তুলনায় অনেকটাই ফিকে। ডানার মাঝখানটায় কমলা-হলুদ। বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত হালকা হলুদ। কটি আলতা-হলদে। উভয়ের ঠোঁট-পা কালচে।
পাখির বাংলা নামঃ ছোট সাহেলি । ইংরেজি নামঃ স্মল মিনিভেট (Small Minivet) । বৈজ্ঞানিক নামঃ Pericrocotus cinnamomeus । এরা ‘সোনা পাখি’ নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন…
•গোলাপি সাত সহেলি
দেশে প্রায় ছয় প্রজাতির সাহেলির সাক্ষাৎ মেলে। এ পাখি দেখতে চমৎকার। এটি আবাসিক পাখি। স্বভাবে লাজুক; শান্তও। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এদের দেখা মেলে। মূলত এরা বনবাদাড়ের পাখি। পারতপক্ষে লোকালয়ে ঘেঁষে না। বনের গাছগাছালিই এদের প্রিয়। উড়ে বেড়ায় বনবাদাড়েই। জোড়ায় জোড়ায় কিংবা ছোট ঝাঁকে শিকারে বের হয়। শিকার ধরার কৌশল বেশ মজার। শূন্যে উড়ে শিকার ধরে। শিকার মুহূর্তে ‘সুই-ই-সুই-ই-ই’ সুরে ডাকে। প্রজনন স্বর ভিন্ন। তখন ‘হু-হু-ইউটি টিটি টিটি’ সুরে ডাকাডাকি করে।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড় ও পতঙ্গ। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর হলেও স্থানভেদে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। গাছের ১২-১৫ মিটার উঁচুতে দুই ডালের ফাঁকে পেয়ালা আকৃতির বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরু লতা, কচুরিপানা, শিকড় ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিম ফুটে ছানা বের হতে সময় নেয় ১৪-১৯ দিন। শাবক উড়তে শেখে ১৫-২০ দিনে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।