খাকি ভুতুম পেঁচা | Tawny Fish Owl | Ketupa flavipes

379
খাকি ভুতুম পেঁচা
খাকি ভুতুম পেঁচা | ছবি: ইন্টারনেট

খাকি ভুতুম পেঁচা আবাসিক পাখি। মূলত এরা নদ-নদী, হ্রদ কিংবা বড়সড় জলাশয়ের কাছাকাছি বৃক্ষে বিচরণ করে। বহমান জলাশয়ের আশপাশে বেশি দেখা যায়। বিচরণের ক্ষেত্র ক্রান্তীয় থেকে নাতিশীতোষ্ণ এলাকা বেশি পছন্দের। এছাড়াও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উচ্চতায় দেখা যাওয়ার তথ্য রয়েছে। অন্যসব পেঁচাদের মতো এরাও দিনের বেলায় গাছ-গাছালির ঘন পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে। দিনের আলো ফুরিয়ে এলে বা গোধূলিলগ্নে শিকারে বের হয়।

একাকী কিংবা জোড়ায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দলবেঁধে বিচরণ করে না। দেখতে ভয়ঙ্কর দর্শন হলেও একেবারেই নিরীহ গোত্রের পাখি। স্বভাবে লাজুক। অন্যসব শিকারি পাখিদের মতো হিংস নয়। কণ্ঠস্বর ভৌতিক। ভরাট কণ্ঠে ‘ওহুহু-হুহু’ আওয়াজ করে মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, উত্তর মিয়ানমার, চীন, তাইওয়ান, লাওস, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত। এ ছাড়াও হিমালয়ের পাদদেশে বিচরণ রয়েছে। প্রজাতিটি বিশ্বব্যাপী হুমকি নয়।

পাখির বাংলা নামঃ খাকি ভুতুম পেঁচা, ইংরেজি নামঃ তানি ফিস আউল (Tawny Fish Owl), বৈজ্ঞানিক নামঃ Ketupa flavipes | এরা ‘তামাটে মেছোপেঁচা’ নামেও পরিচিত।

আরো পড়ুন…
•খয়রা মেছো পেঁচা •কোটরে পেঁচা •ডোরা কালিপেঁচা •ছোটকান পেঁচা
•চিতিপেট হুতুমপেঁচা •ভূমা পেঁচা •খয়রা গাছপেঁচা •উদয়ী নিমপেঁচা
•হলদেবাদামি ভূতম পেঁচা •কালো পেঁচা •লক্ষ্মীপেঁচা

দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৮-৫৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মাথা ও ঘাড় তামাটে-বাদামি ডোরাযুক্ত। মাথার দু’পাশে আছে কান পশম, যা ঝুঁটি আকৃতির দেখায়। চোখের দু’পাশে কপালের ওপর সরু সাদা টান। মুখমণ্ডল তামাটে। দেহের উপরাংশ গাঢ় বাদামি রঙের সঙ্গে তামাটে মিহি রেখা। ডানার উপরে সাদাটে দাগ। লেজ খাটো, গোলাকার। দেহের নিচের দিকে তামাটে-বাদামির আড়াআড়ি রেখা। গোলাকার চোখের বলয় তামাটে-হলুদ রঙের। তারা গাঢ় বাদামি। ঠোঁট শিং রঙা, আকারে খাটো, নিচের দিকে বড়শির মতো বাঁকানো। পায়ের আঙ্গুল ফ্যাকাসে হলদে।

প্রধান খাবারঃ মাছ, কাঁকড়া, সরীসৃপ, ইঁদুর, টিকটিকি, ব্যাঙ ও বাগদাচিড়িং। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের রয়েছে। মরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। এ ছাড়াও গিরিখাত এবং নদীর খাড়া কিনারের গর্তে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৮-২৯ দিন। শাবক স্বাবলম্বী হতে মাসখানেক সময় লেগে যায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।