বাংলা নামঃ নীল হাঁড়িচাচা । ইংরেজি নামঃ রেড বিল্ড ব্লু মেগপাই, (Red-billed Blue Magpie)। বৈজ্ঞানিক নামঃ Urocissa erythrorhyncha | এরা ‘লালঠোঁট নীল তাউরা’ নামেও পরিচিত।
এমনিতে নান্দনিক গড়ন, লম্বা লেজ। পরিমাণ মতো লেজ কেটে দিলে দোয়েল আকৃতির মনে হতে পারে। স্বভাবে হিংস্র, অস্থিরমতির পাখি। এই নীল হাঁড়িচাচা ছোট পাখিদের শত্রু। সুযোগ পেলে ওদের ডিম-বাচ্চা সব সাবাড় করে। কর্কশ কণ্ঠে ধাতব সুরে চেঁচিয়ে ছোট পাখিদের ভয় পাইয়ে দেয়। ছোট পাখিরাও ‘নীল হাঁড়িচাচা’ পাখিকে একদম সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশে মোট চার প্রজাতির হাঁড়িচাচা দেখা মেলে। এরাই পরিযায়ী হয়ে আসে আমাদের দেশে। বিচরণ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ পাহাড়ি এলাকার চিরহরিৎ অরণ্যে। আবাদি জমিতেও দেখা যায়। এরা সাধারণত জোড়ায় কিংবা ছোট দলে বিচরণ করে। একাকী খুব একটা দেখা যায় না। সব সময় গাছগাছালি কিংবা ঝোপের আড়ালে শিকার খোঁজে। বিশেষ করে ছোট পাখিদের বাসা আছে এমন স্থানগুলো খুঁজে বের করে। শিকারের প্রয়োজনে হাঁটুজলে নেমে পড়ে। আবার নিয়মিত গোসল করতেও দেখা যায়।
বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। বিশ্বে এদের অবস্থান মোটামুটি সন্তোষজনক। নীল হাঁড়িচাচার দৈর্ঘ্য কমবেশি লম্বায় লেজসহ ৫৩-৬৪ সেন্টিমিটার। ওজন পুরুষ পাখি ১৪৫-১৯২ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখি ১০৬-১৫৫ গ্রাম। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য খাটো। মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক নীলাভ-কালো। কাঁধ ও পিঠ হালকা নীল। লেজ উজ্জ্বল নীল। লেজের প্রান্ত এবং পাশ দিয়ে সাদা-কালো ডোরার পালক দেখা যায়। বুকের নিচ থেকে বস্তিপ্রদেশ পর্যন্ত নীলচে সাদা। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা কমলা-লাল।
প্রধান খাবারঃ ছোট পাখির ডিম, বাচ্চা, গিরগিটি, সাপ, শামুক ও ছোটফল। এদের প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন। অঞ্চলভেদে ভিন্ন। ভূমি থেকে ৩-৬ মিটার উঁচুতে গাছের ঘন পাতার আড়ালে বা ঝোপের ভেতর সরু কাঠি, চিকন লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৯ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।