চিত্রা ক্রেক বিরল দর্শন, পরিযায়ী পাখি। দেশে খুব বেশি দেখা যাওয়ার নজির নেই। এক সময় সামান্য দেখা গেলেও হালে দেখা যাওয়ার কোনো তথ্য নেই। শীতে পরিযায়ী হয়ে আসত আমাদের দেশে। এদের বিচরণ ভূমি সুপেয় জলের জলাশয়ের কিনারে। বিশেষ করে বাদা বনে এরা আশ্রয় নেয় বেশি। হোগলা বন এদের খুবই প্রিয়। হোগলা বনের ভেতর হেঁটে হেঁটে পোকামাকড় খুঁজে ব্যস্ত সময় পার করে। এ ছাড়াও বড় বড় হাওর-বাওড়ের কিনারেও এদের দেখা যেত। অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির পাখি ‘চিত্রা ক্রেক’। খুব সহজে নজরে পড়ে না, লোক চক্ষুর অন্তরালে থাকে সবসময়।
বৈশ্বিক বিস্তৃতি ইউরোপ, মধ্যএশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত। মূলত এরা জলাশয়ের কিনারে বিচরণ করে। স্যাঁতসেঁতে এলাকা কিংবা হাঁটুজল এবং শুষ্ক অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। একাকী অথবা জোড়ায় বিচরণ করে। প্রজনন মৌসুমে হাঁকডাক বেড়ে যায়। রাতে গাছের ওপর অথবা ঝোঁপ-জঙ্গলের ভেতর আশ্রয় নেয়। স্বভাব অনেকটাই ডাহুকের মতো। দেখতেও তদ্রুপ এবং গোত্রভেদেও এক। চলন-বলন কিংবা খাবার-দাবার সবই ডাহুকের মতোই। এদের আরেকটি প্রজাতির নাম ‘ঘুরঘুরি বা বাদা কুক্কুট’। দেখতে হুবহু চিত্রা ক্রেকদের মতোই। দেখায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। পাখি বিশারদ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে প্রজাতি শনাক্ত করা কঠিই বটে।
পাখির বাংলা নামঃ চিত্রা ক্রেক, ইংরেজি নামঃ স্পটেড ক্রেক, (Spotted Crake), বৈজ্ঞানিক নামঃ Porzana porzana |
আরো পড়ুন…
•রাঙ্গা ঘুরঘুরি
•ঘুরঘুরি
দৈর্ঘ্য কম-বেশি ১৯-২৩ সেন্টিমিটার। শক্ত মজবুত গড়নের ঠোঁটের রঙ লালচে-হলুদ। মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত বাদামির ওপর সাদা রেখা, চিতি এবং কালো দাগ। লেজের নিচের দিকে লালচে-বাদামি। কান ঢাকনি বাদামি। ভ্র সাদা। বুক গাঢ় ধূসর। পেট সাদা এবং বাদামির ওপর সাদা রেখা দেখা যায়। চোখ বাদামি। পা সবুজাভ-হলুদ।
প্রধান খাবারঃ জলজ পোকামাকড়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা খায়। প্রজনন সময় এপ্রিল থেকে জুলাই। অঞ্চল ভেদে প্রজনন সময়ে হেরফের রয়েছে। বাসা বাঁধে জলজ ধান ক্ষেতে কিংবা জলাশয়ের কাছাকাছি। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ঘাস লতাপাতা। ডিম পাড়ে ৬-১৫টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৭-১৮ দিন। শাবক উড়তে শিখে ৪৫-৫০ দিনে।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।