সাদালেজি টি-টি বিরল দর্শন পরিযায়ী পাখি। শীতে দক্ষিণ ভারতীয় উপমহাদেশে হাজির হয়। বৈশ্বিক বিস্তৃতি উপমহাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা পর্যন্ত। বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যাওয়ার নজির নেই। বন্যপ্রাণী গবেষক ড. রেজা খানের ‘বাংলাদেশের পাখি’ গ্রন্থ মোতাবেক জানা যায়, ১৯৯৫ সালে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় রবিশস্যের ক্ষেতে ৫০টি পাখির ঝাঁক দেখা গেছে। অতঃপর কারো নজরে পড়েছে কিনা তা অদ্যাবধি জানা যায়নি। ‘সাদালেজি টি-টি’ হিংস্র নয়, চঞ্চল স্বভাবের। স্থিরতা নেই ওদের মাঝে। কোথাও একদণ্ড দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় যেন ওদের নেই।
সারাদিন দৌড়ের ওপরেই থাকে। চঞ্চল হলেও একদম ঝগড়াঝাটির ধার ধারে না। দেখতে গো-বেচারা টাইপ চেহারা। মায়াবী গড়ন। শরীরের তুলনায় পা বেশ লম্বা। প্রজাতির অন্যসব টি-টি পাখিদের মতোই নদীর অববাহিকায় বিচরণ করে। স্যাঁতসেঁতে এলাকায় পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। ছোট দলে কিংবা একাকী বিচরণ করে। খাবারের সন্ধানে অনেক সময় হাঁটুজল অবধি নেমে পড়ে। সরাসরি জলে নামতে দেখা যায় না খুব একটা বরং কাদাজলে হাঁটু অবধি নেমে খাবার খোঁজে। শুকনো ঘেসো মাঠেও বিচরণ করে। দৌড়ে দৌড়ে পোকামাকড় ধরে। সমুদ্র সৈকতেও দেখা যায়। বালুবেলায় শিকার খুঁজে বেড়ায়।
পাখির বাংলা নামঃ সাদালেজি টি-টি, ইংরেজি নামঃ হোয়াইট টেইলড ল্যাপউইং, (White-Tailed Lapwing), বৈজ্ঞানিক নামঃ Vanellus leucurus | এরা ‘সাদালেজি টি-ট্রিভা’ নামেও পরিচিত।
আরো পড়ুন…
•হলদেগাল টি-টি
•নদী টি-টি
•ধূসর টি-টি
•লাল লতিকা হট্টিটি
দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৬-২৯ সেন্টিমিটার। ডানার দৈর্ঘ্য ৬৭-৭০ সেন্টিমিটার। ওজন ৯৯-১৯৮ গ্রাম। কপাল, ঘাড়, পিঠ ও লেজ হলুদাভ-বাদামি। ডানার কিনার কালো-সাদার লম্বা টান। লেজের প্রান্ত পালক কালো। লেজের মধ্যবর্তী অংশ সাদা। বুক হলুদাভ-বাদামি। বুকের নিচ থেকে লেজের তলা পর্যন্ত ক্রিম সাদা। ঠোঁট ও চোখ কালো। লিকলিকে লম্বা পা দুটি উজ্জ্বল হলুদ।
প্রধান খাবারঃ পোকামাকড়, শুককীট ও ফড়িং। প্রজনন মৌসুম এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মধ্য জুলাই, তবে সুদান, ইরান-ইরাক এপ্রিল থেকে মে। অঞ্চলভেদে প্রজনন মৌসুমের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। যেমন রাশিয়ায় সেপ্টেম্বরে প্রজনন ঘটে। বাসা বাঁধে নদীর উপত্যকায় ঘাস-লতা বিছিয়ে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৪ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।