টুনটুনি অতি সুলভ দর্শন আবাসিক পাখি। দেশের এমন কোনো গাঁও-গ্রাম বা শহর নেই, যেখানে এদের সাক্ষাত পাওয়া যাবে না। খোদ রাজধানীতেও দেখা মেলে। ছেলে-বুড়ো সবাই প্রজাতির সঙ্গে পরিচিত। নানা কারণেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে আমাদের শিশুসাহিত্যে ‘টুনটুনি’ পাখি পাকাপোক্তভাবে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ছড়া-গল্প-গান কোথায় নেই টুনটুনি? শুধু কি তাই? এরা আমাদের বসতঘরের গা-ঘেঁষা ঝোপজঙ্গলে সব সময়ই লাফিয়ে বেড়ায়। কিংবা নাচানাচি করে লেজ উঁচিয়ে। গান শোনায় ‘টিন-টিন-টিন-টিন বা কিট-কিট-কিট-কিট-’ আওয়াজ করে। মায়াবী চেহারা। স্বভাবে ভারি চঞ্চল।
স্থিরতা নেই খুব একটা। যেন একদণ্ড বসার সুযোগ নেই কোথাও। এই আছে তো এই নেই। তবে যেখানেই থাকুক না কেন এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। জোড়ের পাখিটি সামান্য দূরে থাকলেও ডাকাডাকি করে ভাবের আদান-প্রদান চালিয়ে নেয়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি নানা কসরত করে স্ত্রী পাখির মন ভোলাতে। বাসা বাঁধে বেশ পরিপাটি করে। দুটি পাতাকে একত্রিত করে ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বাঁধে। অনেকটা দর্জির কাপড় সেলাই করার মতো। ইংরেজি নামকরণেও সেই রকমটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ পাখির প্রধান শত্রু বাড়ির বিড়াল। মাটির কাছাকাছি বাসা বাঁধার কারণে বিড়াল সে সুযোগটি নেয়। তথাপিও দেশে এদের অবস্থান সন্তোষজনক। কারণ এরা বিড়াল দ্বারা আক্রান্ত হলেও মানুষ দ্বারা নির্যাতিত হয় না খুব একটা। মানুষ এদের যথেষ্ট মায়া করে।
পাখির বাংলা নামঃ টুনটুনি, ইংরেজি নামঃ কমন টেলর বার্ড, (Common Tailor-bird), বৈজ্ঞানিক নামঃ Orthotomus sutorius |
আরো পড়ুন…
•পাহাড়ি টুনটুনি
•কালাগলা টুনটুনি
লম্বায় ১২-১৩ সেন্টিমিটার। মাথা পাটকিলে। পিঠ থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত জলপাই রঙের। ডানা ফিকে বাদামি। দেহতল সাদাটে। চোখ ফিকে বাদামি। ঠোঁট লম্বা সুচাল। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। স্ত্রী পাখি আকারে সামান্য খাটো। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির লেজ খানিকটা লম্বা হয়ে যায়।
প্রধান খাবারঃ ফুলের মধু, ছোট পোকামাকড়। পারত পক্ষে মাটিতে নেমে খাবার সংগ্রহ করে না। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর। বাসা বাঁধে মাটির কাছাকাছি গাছের পাতায়। সেলাই করা বাসার ভেতর নরম তন্তু বা তুলা দিয়ে পরিপাটি করে ৩-৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় নেয় ১৪-১৫ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথা সাহিত্যিক, কলাম লেখক, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং পরিবেশবিদ।