মুন্সীগঞ্জের ‘নগরকসবা বড়বাড়ি’। বেড়াতে যেতে হবে। ফোন করেছে আমার এক বোন। ওর অভিযোগ বিস্তর। বেড়াতে যাইনি কেন, এটি ছিল গুরুতর অভিযোগের একটি। কথা দিয়েছি বেড়াতে যাব। বলল, ‘আসার সময় পাখি দেখার জিনিসপত্র নিয়ে আসবেন।’ কথাটা শুনে বুঝে গেছি সব। উৎসাহ বেড়েছে অনেকটাই। পাখির নাম জিজ্ঞেস করতে সোজাসাপ্টা জবাব, ‘চিনি না।’ শুনে রাতের ঘুম হারাম। যেহেতু পাখিটি সে চেনে না, তাহলে নিশ্চয় দুর্লভ কোনো পাখি হবে!১৪১৯-এর পহেলা বৈশাখ। অফিস বন্ধ। কাজেই মোক্ষম সুযোগ এটি। দেরি না করে সরঞ্জামাদি ব্যাগে গুছিয়ে রেখে ছেলেকে নিয়ে বোনের বাসায় হাজির। আমাদের আগমনে সে ভীষণ খুশি। বাড়ির চারপাশটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে প্রথম। সে সুবাদে বাগানে একটা ‘ধূসর কসাই’ পাখির সাক্ষাৎ পেয়েছি।
ক্যামেরাবন্দি করতে ভুলিনি ওটাকে। ছবিটা কখন প্রয়োজন পড়ে বলা যায় না। কথা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছি, ‘কোন পাখিটার কথা বলেছ আমাকে? কথার জবাব না দিয়ে বোন ওর শোবার ঘরে নিয়ে গেল আমাদের। মুখ খুলল এবার। বলল, ‘বিছানায় বসে পূর্বদিকের মরা গাছটার দিকে তাকান।’ শোবার ঘরের জানালা থেকে আনুমানিক ফুট দশেক দূরে অর্ধমৃত গাছটার অবস্থান। পত্রপল্লবহীন বেচারি দাঁড়িয়ে আছে এক ঠায়। গাছটির সমস্ত শরীর উলঙ্গ। ছাল-বাকল অবশিষ্ট নেই একটুও। ওর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে পাখি দুটি। গাছের একেবারে গলার পাশে ছোট্ট পরিধির একটি কোটর বানিয়েছে। ধরে নিয়েছি ওটি কাঠ ঠোকরার বাসা। মনটা খারাপ করে ক্যামেরা তাক করেছি মাত্র, অমনি সাপের মাথার মতো একটি মাথা বেরিয়ে এলো। বড় দুটি চোখ প্রসারিত করে একটি পাখি সবে উঁকি দিয়েছে কোটর থেকে। ছেলে চেঁচিয়ে উঠেছে, ‘ ওই যে।’ ওকে ইশারায় চুপ থাকতে বলেছি। এ ফাঁকে পাখিটি কোটর থেকে বেরিয়ে পাশের গাছের ডালে অবস্থান নিয়েছে। সুযোগ পেয়ে বেশকিছু ছবি তুলে ফেলেছি। ‘ব্যস সেরেছে। বেড়াতে আসাটা সার্থক হয়েছে আমার।’ উচ্চস্বরে বোনকে জানিয়েছি। যে পাখিটার কথা বলেছি সেটি হচ্ছে, ‘বড় বসন্ত বাউরি।’ খুব কম দেখা যায় এ দেশে। দুর্লভ বলা যায়। সমগ্র পৃথিবীতে রয়েছে প্রায় ৭৬ প্রজাতির বসন্ত বাউরি। তন্মধ্যে এটিই বড় প্রজাতি। কোকিলের মতো এদের বসন্তকালে বেশি দেখা যায়।
বাংলা নামঃ বড় বসন্ত বাউরির ইংরেজি নামঃ লার্জ গ্রিন বারবেট (Large green barbet), বৈজ্ঞানিক নামঃ Megalaima zeylanica, গোত্রঃ মেগালাইমিদি |
আরো পড়ুন…
•নীলকান বসন্তবউরি
•সোনালি গলা বসন্তবউরি
•নীলকণ্ঠ বসন্তবউরি
•ছোট বসন্তবাউরি
•বেঘবৌ
লম্বায় ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার। পাখিটা দেখতে সম্পূর্ণ সবুজ মনে হলেও, আসলে আরও কিছু বর্ণ লুকিয়ে রয়েছে ওদের পালকে। মাথা ও গলা হালকা বাদামি। গলার নিচে সাদা টান। চোখের মণি বড়, চারপাশটা হলুদাভ-কমলা। ঠোঁট ও পা হালকা হলুদ। কপাল এবং পালকের উপরিভাগ গাঢ় বাদামি। নাকের গোড়ায় গোঁফের মতো কিছু খাড়া লোম রয়েছে। লেজটা খাটো। শরীরের তুলনায় মাথাটা বড়। ফলে চেহারার মায়াবীভাব হ্রাস পেয়েছে।
প্রধান খাবারঃ ফলমূল। এদের কণ্ঠস্বরে রয়েছে এক ধরনের বিষণ্নতা। কুক … কুক শব্দে ডাকে। ডাকটা শুনতে ভালোই লাগে। দূর থেকেও শোনা যায়। বড় বসন্ত বাউরির প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। গাছের কোটরে ডিম পারে। ডিমের সংখ্যা ২-৪টি। স্ত্রী-পুরুষ ডিমে পালা করে তা দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।