পাকড়া মাছরাঙা | Pied Kingfisher | Ceryle rudis

177
Pied Kingfisher
পাকড়া মাছরাঙা | ছবি: উকিপিডিয়া

প্রায় দেড় যুগ আগে একবার সুন্দরবন গিয়েছি পাখি দেখতে। উত্তাল বলেশ্বর নদী পাড়ি দিয়ে শরণখোলা রেঞ্জের অধীন সুপতির জঙ্গলে গিয়েছি প্রথম। জঙ্গল ভ্রমণে বের হয়ে আতিপাতি করে খুঁজতে লাগলাম হরেক রকম পাখ-পাখালির প্রজাতি। অনেক প্রজাতির পাখি চোখে ঠেকেছে সেদিন। কিন্তু যে পাখিটি মনে দাগ কেটেছে বেশি সেটি হচ্ছে ‘পাকড়া মাছরাঙা’ বা ‘ডোরাকাটা মাছরাঙা’। অঞ্চলভেদে পাখিটির আরও কিছু নাম রয়েছে। যেমন : ‘চিতে মাছরাঙা’, ‘কড়িকাটা মাছরাঙা’ ইত্যাদি। তবে যে যেই নামেই ডাকুক না কেন পাখিটি যে মনোহরণকারী তা স্বীকার করতেই হবে। কী যে সুন্দর রূপের অধিকারী, তা নিজ চোখে না দেখলে বোঝানো মুশকিল হবে বোধ করছি!

পাকড়া মাছরাঙা সর্বশেষ কদিন আগে দেখেছি মুন্সীগঞ্জের ‘চরগঞ্জকুমারিয়া’ নামক স্থানে। ধলেশ্বরীর তীরঘেঁষে চরটির অবস্থান। পাখিটি নদীর তীরে একটি কঞ্চির ওপর বসে চিররুক… চিররুক শব্দ করছে। ওকে না ঘাঁটিয়ে চোখে বাইনোকুলার ঠেসে ধরে দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। বেশ মজা পেয়েছি পাকড়া মাছরাঙাটিকে দেখে সেদিন। আমাদের দেশে মোট সাত ধরনের মাছরঙা দেখা যায়। এর মধ্যে সৌন্দর্যের দিকে এগিয়ে রয়েছে পাকড়া মাছরাঙা। এদের বিচরণ দক্ষিণাঞ্চলে বেশি। অন্যত্র খুব বেশি নজরে পড়ে না।

পাকড়া মাছরাঙার ইংরেজি নামঃ পায়েড কিংফিশার (Pied Kingfisher), বৈজ্ঞানিক নামঃ সরাইল রুডিস (Ceryle rudis)। এরা সেরিলিদি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

আরো পড়ুন…
•বাদামি মাছরাঙা •মেঘহও মাছরাঙা •ঝুঁটিয়াল মাছরাঙা
•কালোটুপি মাছরাঙা •ব্লাইথের ছোট মাছরাঙা •ধলাগলা মাছরাঙা
•নীলকান মাছরাঙা •লাল মাছরাঙা •ছোট মাছরাঙা

পিঠের বর্ণ সাদা-কালো। গলার নিচ থেকে লেজের তলদেশ পর্যন্ত সব পালক রেশমি সাদা। ঠোঁট ও পা দেখতে কালো মনে হলেও আসলে সম্পূর্ণ কালো নয়। পিটকিলে কালো। লম্বায় লেজসহ প্রায় ৮-১০ ইঞ্চি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে এক রকম মনে হলেও কিছুটা পার্থক্য নজরে পড়ে। পুরুষ পাখির মাথায় কালো ঝুঁটি এবং গলায় কালো মালা রয়েছে। ঝুঁটির নিচ থেকে চোখের ওপরে কালো লাইন টানা। পাকড়া মাছরাঙার বাস সাধরণত নদী কিংবা জলাশয়ের ধারে।

প্রধান খাবারঃ মাছ, ছোট ব্যাঙ, জলজ পোকা-মাকড়। এরা ২০-২৫ ফুট উঁচুতে বসে শিকারের মতলব আটে। শিকারের সন্ধান পেলে ডানা গুটিয়ে ঠোঁটটাকে নিচের দিকে সোজা রেখে জলে ঝপাৎ করে লাফিয়ে শিকার ধরে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! এদের প্রজননকাল বসন্ত এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে। আড়ালে-আবডালে প্রজননকর্ম সম্পাদন শেষে স্ত্রী-পুরুষ মিলে জলাশয়ের ধারে মাটি খুঁড়ে গর্ত বানিয়ে বাসা তৈরি করে। গর্তটা মোটামুটি গভীর। বাসা তৈরির কাজ শেষ হলে স্ত্রী পাখি ৪-৬টি ডিম পাড়ে। তারপর দুজন পালা করে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চা স্বাবলম্বী হলে স্ত্রী-পুরুষ পাখি আলাদা হয়ে যায়।

লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলাম লেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।

Worlds Largest Bangla Birds Blog