অতি সুলভ দর্শন, পান্থ পরিযায়ী পাখি (চলার পথের প্রজাতি)। শীত আগমনের পূর্বেই পরিযায়ী হয়ে আসে উত্তর ও মধ্য এশিয়া থেকে। মূলত এরা সৈকতচারী পাখি। ঠিক অক্টোবরের দিকে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নেয় উপকূলীয় এলাকার বনাঞ্চলের জলাশয়ের কাছাকাছি কিংবা মোহনা ও দ্বীপাঞ্চলের বালুকারাশিতে। বিচরণ করে পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণার ধারেও। অনেক সময় উপকূলীয় এলাকার লোকালয়ের হালচাষ করা জমিতেও বিচরণ করতে দেখা যায়। এরা ছোট-বড় কিংবা মিশ্র দলে শিকারে বের হয়। দলে অনেক সময় হাজারখানেক পাখিও দেখা যায়।
সারাদিন বালুকারাশি বা বালুকাদাময় এলাকায় পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। খাদ্যের সন্ধানে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতে দেখা যায়। চলার পথে মাঝে মাঝে ‘টুউ-ইট টুউ-ইট ইট্টাপ ইট্টাপ’ সুরে ডাকে। সুর তেমন শ্রুতিমধুর নয়। ডানা লম্বা এবং ছুঁচাল বিধায় উড়তে পারে বেশ দ্রুত। দৌড়াতেও পারে দ্রুতগতিতে। বেশ মিশুক পাখি। সৈকতচারী অন্য সব প্রজাতি পাখির সঙ্গে মিলেমিশে কাটিয়ে দেয়। বিশ্বে বিপন্মুক্ত। বাংলাদেশেও ভালো অবস্থানে রয়েছে।
পাখির বাংলা নামঃ জিরিয়া, ইংরেজি নাম: কেন্টিশ প্লোভার, (Kentish plover), বৈজ্ঞানিক নামঃ চারাড্রিয়াস আলেকজান্ড্রিনাস, (Charadrius alexandrinus)। এরা ‘ভাঙ্গা অঙ্গুরী বাটান’ নামেও পরিচিত।
প্রজাতিটি লম্বায় ১৫-১৭ সেন্টিমিটার। শীতে রং বদলায়। মাথা লালচে বাদামি। ভ্রু সাদা। ঘাড়ে সাদা বন্ধনী। বন্ধনীটা অনেক সময় অপূর্ণ দেখায়। পিঠ ও ডানা ধূসরাভ-বাদামি। ওড়ার পালক ধোঁয়াটে। বুকের পাশ কেটে বাদামি ছোপ ডানার সঙ্গে মিশেছে। যা প্রজনন মৌসুমে কালো দেখায়। বুক থেকে লেজের তলদেশ পর্যন্ত সাদা। ঠোঁট শক্তপোক্ত কালো। ডাগর ডাগর চোখ কালো রঙের। লম্বা, কালচে পা জলের ভেতর দিয়ে হাঁটতে উপযোগী। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবারঃ শুককীট, ছোট কাঁকড়া ও অন্যান্য পোকামাকড়। প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে মে। উত্তর ও মধ্য-এশিয়ার নিজস্ব বাসভূমিতে জলাশয়ের কাছাকাছি মাটিতে সামান্য খোদল করে অথবা সমতল ভূমিতে বাসা বাঁধে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সরাসরি মাটিতে ডিম পাড়তে। উল্লেখ্য, পাখি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ জানিয়েছেন তারা নাকি উপমহাদেশের সিন্ধু, বেলুচিস্তান, শ্রীলঙ্কা, গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে এদের বাসা বাঁধতে দেখেছেন। এরা ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিম ফুটাতে সময় লাগে ২০-২১ দিন।
লেখকঃ আলম শাইন। কথাসাহিত্যিক, কলামলেখক, বন্যপ্রাণী বিশারদ ও পরিবেশবিদ।